শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

ঢাকার দুই সিটিতে মশার কামড়ে ঘুম হারাম নগরবাসীর

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ২৮ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭: ঢাকার দুই সিটিতে ময়লা-আবর্জনা এবং জমে থাকা পানিতে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। এতে করে মশার কামড়ে ঘুম হারাম হয়ে গেছে নগরবাসীর। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশাবাহিত রোগও। দুই সিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করলেও তাদের মশক নিধন কার্যক্রম খুব একটা চোখে পড়ে না। আর আগের মতো সন্ধ্যায় মশাবাহিত ফগার মেশিনের ভনভনানি শব্দ শোনা যায় না।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, কর্মস্থল, চলতি পথ কোথাও মশার কামড় থেকে নিস্তার মিলছে না। নগরবাসীকে মশার উপদ্রবের হাত থেকে রেহাই পেতে দুই সিটি কর্পোরেশন বছরে প্রায় ৪২ কোটি টাকা খরচ করলেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ডোবা-জলাশয়গুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা এবং নিয়ম মেনে মশার ওষুধ না ছিটানোর কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, শীত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রবও বৃদ্ধি পায়-এাঁ তো সংশ্লিষ্টরা জানেন। তাহলে আগে থেকে প্রস্ততি নেন না কেন? মশক নিধনে আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে তো নগরবাসী মশার দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পেত। অভিযোগ রয়েছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা লিখিত ও মৌখিকভাবে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানালেও তারা সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
জানা গেছে, নগরীর আদাবর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মতিঝিল, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, চকবাজার, কুড়িল, উত্তরা, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দারা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে আদাবরের বাসিন্দা হাজি আবদুস সোবাহান জানান, এলাকাভিত্তিক প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর নিয়ম থাকলেও আমাদের এলাকায় মাসে একদিনও কাউকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা আবু তালেব জানান, বসিলা আবাসিক এলাকার ভেতর একটি খাল রয়েছে। খালটি ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। কখনো খালটি পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩১২ একর জলাধার রয়েছে। এগুলো কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভর্তি। একই চিত্র ১৪, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ওয়ার্ডের ৩২ একর জলাধারের। এছাড়াও ৭, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৪ বিঘা ৯ কাঠা জলাশয় দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। জানা যায়, ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগে স্প্রেম্যান রয়েছে ১৮৩ জন, ক্রু ম্যান রয়েছে ১৫১, সুপারভাইজার রয়েছে ১০ জন। ফগার মেশিন রয়েছে ৩৮৭টি, হস্তচালিত মেশিন রয়েছে ৪৩৮টি, হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে ৩৬টি, ইউএলভি মেশিন রয়েছে ২টি, পাওয়ার স্পেয়ার রয়েছে ৫টি এবং ন্যাপসেক পাওয়ার রয়েছে ১টি। এর মধ্যে ৭১টি ফগার মেশিন, ৫৯টি হস্তচালিত মেশিন, ৮টি হুইল ব্যারো, ২টি ইউএলভি, ৫টি পাওয়ার স্পেয়ার ও ১টি ন্যাপসেক পাওয়ার মেশিন নষ্ট।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি অঞ্চলে জলাধার রয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ বিঘা। এর মধ্যে অন্যতম এলাকা হচ্ছে বসিলা, গাবতলী, মিরপুর, কুড়িল, গুলশান ও উত্তরা। এছাড়াও অন্য এলাকায় বেশকিছু জলাধার রয়েছে। আর ডিএনসিসির ৩০৯ জন মশক নিধন শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে স্প্রেম্যান রয়েছে ১২০ জন এবং ক্রু ম্যান রয়েছে ১৮৯ জন। সুপারভাইজার রয়েছে ৮ জন। এছাড়াও ফগার মেশিন রয়েছে ২১৭টি, হস্তচালিত মেশিন রয়েছে ২৮৭টি এবং হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে ১টি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন জানান, শীতের মৌসুম মশার বংশ বিস্তারের সহায়ক পরিবেশ থাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। এখন যতটুকু বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে। তবে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি এরই মধ্যে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে ডিএসসিসি এলাকার জলাধারগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব জলাধার পরিষ্কার কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়াও অন্য কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান ডিএসসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এসএম সালেহ ভূঁইয়া জানান, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে আমরা জলাধার পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। বেশিরভাগ এলাকার জলাধার পরিষ্কার এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ নিয়মিত করার বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, শীতের দিন মশার উৎপাত একটু বেশি থাকে। এই উপদ্রব কমানোর জন্য ওষুধ ছিটানোর কাজ চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *