শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

ঢাকায় বেপরোয়া ছিনতাইকারী

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪২ পাঠক
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮: গত ১৮ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় ছিনতাইকারীদের টানে রিকশারোহী মায়ের কোল থেকে পড়ে সাত মাসের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক সেই ঘটনায় শিউরে উঠেছিল সারা দেশ। আরাফাতের মা আকলিমার শোকের মাতম এখনো থামেনি। এর মাঝেই গতকাল ঢাকায় আবার ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ হারালেন দুজন। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার যেন কেউ নেই!
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতায় এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ‘টানা পার্টি’র দৌরাত্ম্য; যারা ছোঁ মেরে ব্যাগ, ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়। আর এতে যানবাহন থেকে পড়ে গিয়ে ঘটছে মায়ের বুক খালি করার ঘটনা।

রাজধানীর সম্প্রতি অপরাধ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছিনতাইকারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ টানা পার্টির হাতেও নিয়মিত নিহত হচ্ছে মানুষ।

রাজধানীর সায়েদাবাদ রেললাইন গলিতে গতকাল ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন এক যুবক। নিহত ইব্রাহিম (৩৫) একটি মোটর ওয়ার্কশপ পরিচালনা করতেন। তার বাড়ি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার শেখপাড়ায়। ইব্রাহিম ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গে-ারিয়ার স্বামীবাগ সায়েদাবাদ রেললাইনের পাশের গলি দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে।
অপরদিকে, প্রায় একই সময়ে ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারীরা গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছে এক নারীকে। প্রাইভেটকারে আসা ছিনতাইকারীর দল হাত থেকে ব্যাগ টেনে ছিনিয়ে নেওয়ার সময় সেই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান হেলেনা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূ। নিহত হেলেনা গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানম-ি ৭ নম্বর সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে মতিঝিলে হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় রিকশা থেকে পড়ে আহত হন এফবিসিসিআইয়ের এক নারী কর্মকর্তা।

গত মাসের শুরুতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে টানা পার্টির কবলে পড়ে মারা যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। বিকালে কর্মস্থল থেকে রিকশায় চড়ে মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা টান দিয়ে তার ব্যাগ নিয়ে যায়। এতে তিনি ছিটকে রাস্তায় পড়েন। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এর দুই মাস আগে টিকাটুলীতে এক নারীকে ছিনতাইকারীদের কবল থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবু তালহা খন্দকার।
পরে গত ১৮ ডিসেম্বর ভোরে পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ রেললাইনের কাছে ছিনতাইকারীরা গৃহবধূ আকলিমা বেগমের ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিলে তার কোল থেকে পড়ে মারা যায় ছয় মাসের শিশু আরাফাত। ওই ঘটনা বহুল আলোচিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাতে ওয়ারীতে শাহীদা নামের এক নারীর পায়ে গুলি করে টাকাসহ হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এর আগে মৌচাক এলাকায় রিকশায় যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল হক।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ছিনতাই ও ব্যাগ টানার ঘটনা ঘটছে ভোরে, বিকালে কিংবা সন্ধ্যার পর। সবক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় যান না আরও হয়রানির আশঙ্কায়। এ জন্য পুলিশের নথিপত্রেও এসব ঘটনার উল্লেখ থাকে হাতেগোনা।

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিদের ভাষ্য মতে, পুলিশ জানে কোন কোন এলাকা ছিনতাইপ্রবণ। এরপরও ব্যবস্থা নিতে তাদের অনেক অনীহা। আর ঘটনা জানালেও প্রভাবশালী না হলে প্রতিকার পাওয়া যায় না। বরং নানান ভোগান্তি সইতে হয়।

তবে, পুলিশের ভাষ্য মতে, ছিনতাইয়ের ঘটনা জানালে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের হিসেব মতে, রাজধানীর ১৪১টি স্পট আছে যেখানে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আবার এলাকাভিত্তিক বখাটেরাও ছিনতাইয়ের ‘গ্যাং পার্টি’ গড়ে তুলছে।

পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকা নিয়ে একটি তালিকা করেছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের কলেজগেট থেকে রিং রোড, আগারগাঁওয়ের সংযোগ সড়ক, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মৌচাক মার্কেট থেকে মগবাজার, সদরঘাট থেকে সূত্রাপুর-দয়াগঞ্জ, ওয়ারী, উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুর, ঝিগাতলা থেকে রায়েরবাজার-শংকর, মিরপুরের রূপনগর-বেড়িবাঁধ, যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড়-শ্যামপুর উল্লেখযোগ্য।

প্রতিদিন বাড়তে থাকা টানা পার্টি ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে তাই দেখা দিচ্ছে নানা প্রশ্ন।
ঢাকায় বেপরোয়াভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন খোলা কাগজকে বলেন, ছিনতাইকারীরা কৌশল পাল্টেছে। আগের সময়ে তারা এ অপরাধ সংঘবদ্ধভাবে ঘটালেও এখন বিচ্ছিন্নভাবে ঘটাচ্ছে। ভাসমান অপরাধীরাই সাধারণত এই অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। চিহ্নিত ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য অধিকাংশ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছে। অন্য যারা রয়েছে তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। একদিক থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হলেও অন্যদিক থেকে তারা জামিনে বেরিয়ে আসছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *