বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

তিনদফা রায় পেয়েও জমির দখল পাচ্ছেন না ভিক্ষুক কছর আলী

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩২ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

সিরাজুল ইসলাম রতন, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের সীচা মধ্যপাড়া গ্রামের দরিদ্র অসহায় ভিক্ষুক কছর আলীর এক একর ৪৯ শতাংশ জমি ক্ষমতার দাপটে জবর দখল করে নিয়েছে তার প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজন। ২০ জুন শনিবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বেহাত হওয়া ওই জমি ফেরত পাওয়ার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান ওই ভিক্ষুক কছর আলী।

সংবাদ সম্মেলনে কছর আলী লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সুন্দরগঞ্জের সীচা মধ্যপাড়া গ্রামের তার পিতা কবি বকসের কাছ থেকে পৈত্রিক সূত্রে এক একর ৪৯ শতাংশ জমি পায় কছর আলী। এসব জমি নিলামে (মিথ্যা কথা বলে) পেয়েছে দাবি করে ষাটের দশকে বাড়ী থেকে স্ত্রীসহ সহজ সরল কছর আলীকে তাড়িয়ে দেয় তারই চাচা আমির আলী, হাছেন আলী, দছিম উদ্দিন, বাবু মিয়া ও নয়া মিয়া। এসময় মানবিকদিক বিবেচনা করে বসবাসের জন্য স্ত্রীসহ কছর আলীকে প্রতিবেশী অনিল সাহা আশ্রয় দেয়। সেই জমিতে কছর আলী, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনিরাসহ বসবাস করছে এখনো। এদিকে কছর আলীকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তার চাচারা কছর আলীর ৮৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয় প্রতিবেশি সাখাওয়াৎ হোসেন প্রামানিক, শহিদুর রহমান প্রামানিক, শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক, শামীম হোসেন, সাইদুর রহমান, মো. শাহানুর রহমান, সাদেক আলী, তাজুল ইসলাম, মজিবর রহমান ও মকতুল হোসেনের কাছে। এসময় কছর আলীর ঘরে জন্ম নেয় এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও মেয়েরা বিবাহিত। ২০১৬ সালে কছর আলীর স্ত্রী মারা যায়। বাড়ী থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর কছর আলী কৃষি কাজ করতে থাকে। পরে বয়সের ভাড়ে পরিশ্রম করতে না পারায় কছর আলী এখন ভিক্ষা করে কোনমতে দিনাতিপাত করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

কছর আলী একজন সরকারি আইনজীবীর সাথে দেখা করে একটি আইনগত মতামত নিয়েছি। আর তা হলো- ১৯৯৩ সালে কছর আলী ১৪৯ শতাংশ জমি ফেরতের দাবিতে গাইবান্ধা আদালতে একটি মামলা (১১৪/৯৩) দায়ের করে। এই মামলাটি ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর পক্ষে রায় পায় ও ডিক্রি প্রাপ্ত হয় কছর আলী। পরবর্তীতে সেই রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে হাসেন আলীর ছেলে মো. বদিয়াজ্জামান আপিল করলে ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর আপিলটি খারিজ হয় ও পূর্বের রায় বহাল থাকে।

পরে ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি আদালত থেকে জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে আসা হয় কছর আলীকে। এরপর কছর আলীর ৫৬ শতাংশ জমি ক্রেতা সাখাওয়াৎ হোসেন প্রামানিক ও সাদেক আলী ২০০৫ সালে গাইবান্ধা আদালতে একটি মামলা (১৭৫/২০০৫) দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৯ জুন এই মামলাটি খারিজ করে দিয়ে আদালত কছর আলীর পক্ষে রায় দেয়। এই খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে সাখাওয়াৎ হোসেন প্রামানিক গাইবান্ধা আদালতে আপিল দায়ের করলে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি আপিল মঞ্জুর করেন আদালত ও রায়ে ৫৬ শতাংশ জমির রায় পক্ষে পায় সাখাওয়াৎ হোসেন প্রামানিক ও সাদেক আলী। সাখাওয়াৎ হোসেন ও সাদেক আলীর পক্ষে যাওয়া এই রায়ের স্থগিত চেয়ে কছর আলী হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন (১০৩২/৭) দায়ের করে। বর্তমানে হাইকোর্টে মামলাটি চলমান আছে ও হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে, জমি যেভাবে যার দখলে আছে সে সেভাবেই ভোগদখল করবে।

এদিকে ১৪৯ শতাংশ জমির মধ্যে ৫৬ শতাংশ বাদে বাকী ৯৩ শতাংশ জমির দখল নিতে গিয়ে ৭টি মামলার শিকার হয়ে হয়রানী ও জেল খেটেছে কছর আলী ও তাকে সহযোগিতাকারী আত্মীয়রা। গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে ঘর থাকতেও বাড়ী ছাড়া কয়েকটি পরিবার। কছর আলীর ছেলে দানেশ আলী, মেয়ে ফাতেমা, জামাতা জবেদ আলী, চাচাতো ভাই লুৎফর রহমান, ভাতিজা সাইদুর রহমান ও জুয়েল মিয়া বলেন, ২০১১ সাল থেকে মামলা শুরু হয়। পরে ২০১৪ সালের দিকে গ্রেফতার ও হয়রানী থেকে বাঁচতে তিনটি পরিবার বগুড়া ও ঢাকায় গিয়ে বসবাস করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাইদুর রহমান, মো. জোবেদ আলী, ফাতেমা বেগম, জুয়েল মিয়া প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *