শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

পলাশবাড়ীতে নিরুর্দ্দেশ প্রবাসী স্বামীকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তপেক্ষ কামনা

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪০ পাঠক
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

সিরাজুল ইসলাম রতন,বর্তমানকণ্ঠ ডটকমঃ
আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে পরিবার থেকে প্রায় ৪ বছর নিরুর্দ্দেশ। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে তার বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানের অমানবিক অসহায়ত্ব জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সুদান কিংবা লিবিয়াগামী নিরুর্দ্দেশ স্বামী জাফিরুল ইসলামকে (৫০) উদ্ধারের জন্য স্ত্রী রোজিনা বেগম মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে পলাশবাড়ী থানায় একটি (নং-১০, তাং-০৯/০৯/২০১৬) মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউপি’র সাকোয়া গ্রামের দুলা ব্যাপারির ছেলে দুই সন্তানের জনক জাফিরুল ৪ বছর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি একটি সংঘবদ্ধ আদম ব্যাপারি চক্রের প্রলোভনে পড়ে সুদানে যান। বিদেশে পাড়ি দেয়ার আগে ভূক্তভোগী পরিবারটি প্রতারক চক্রের সহযোগি একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী মহদীপুর ইউপি’র বড় গোবিন্দপুর গ্রামের আইজার সরকারের ছেলে আঃ হালিমের মধ্যস্থতায় মুন্সিগঞ্জ জেলার চরডুমুরিয়া গ্রামের জনৈক সাজ্জাদ হোসাইন ও আমিনুল ইসলাম নামীয়সহ দেশী-বিদেশী সংঘবদ্ধ চক্রের নিকট গত ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথমত ২ লাখ ২০ হাজার প্রদান করেন। পরবর্তী সময় আমার স্বামী সুদানে থাকাবস্থায় চক্রটি আমার স্বামীকে বিভিন্ন ভয়ভীতিসহ খুন করার হুমকি প্রদর্শন করে আরো মোটা অংকের টাকা দাবী করে বসেন। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলের পর হতে ফোনে আমার স্বামীর সাথে আর কোন যোগাযোগ হচ্চিল না। ২০১৬ সালের ১২ মে মোবাইল থেকে আমার স্বামী আমাকে ফোন করে জানান আদম পাচারের ওই চক্রটি আমাকে সুদান থেকে লিবিয়ায় নিয়ে বিনা বেতনে শ্রম শোষন করিতেছে।

এক পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি আমাকে ফোন করে বলে লিবিয়ায় তোমার স্বামী মোটা বেতনে চাকরী পাবে। তবে আরো সাড়ে ৪ লাখ দিতে হবে। যথাসময় টাকা প্রেরণ না করলে তোমার স্বামীকে মারিয়া ফেলিব। জাফিরুলের বাবা-মা আমি ও বর্তমানে দশম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে জাফরিনা খাতুন ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার ছেলে রাকিবুল হাসান রোকনসহ পরিবারের লোকজন এ খবর শুনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ধার-দেনা করে ডাচ্বাংলা ব্যাংক লিঃ গোবিন্দগঞ্জ শাখা হতে ওই চক্রের একাউন্ট নম্বরে ২০১৬ সালের ১৩ জুন নগদ ২ লাখ টাকা প্রদান করি। কিন্তু এরপরেও বিপদগ্রস্ত আমার স্বামীর দুঃখ-দুর্দশা লাঘব না হয়ে বরং আরো বিপদগামী হন। প্রতারক চক্রটি ২ লাখ টাকা নেয়ার পরেও ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি ফোন থেকে আমার স্বামীর ফুফাতো ভাই আঃ রহমানের মোবাইলে ফোন করে বলে জাফিরুলকে লিবিয়ায় আটক রাখা হয়েছে। বাকী টাকা প্রেরণ না করলে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন অব্যাহত রাখবে বলে তারা জানান।

প্রতারক চক্র দফায়-দফায় টাকা গ্রহণ করলেও স্বামীর মুক্তিপনে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একটি মোবাইল ফোন থেকে আমার ফোন নম্বরে চক্রটি আবারো ৫ লাখ টাকা দাবী করে বসেন। তা না হলে এবার আর তোমার স্বামীর রক্ষা নেই।

এদিকে মামলা দায়েরের পর বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকার সিআইডি ডিএমপি’র দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী এলাকা হতে মানব পাচারকারী চক্রের এক সদস্য মালিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার চর চারাভাংগা গ্রামের মৃত কালাচানের ছেলে নুর হোসেনকে আটক করে। কিন্তু আইনের বেড়াজাল ভেঙ্গে ধৃত নুর হোসেন জামিনে মুক্তি পান। বিগত ৪ বছর ধরে স্বামী জাফিরুলের অবর্তমানে তার পরিবার দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে।

পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে স্ত্রী রোজিনা তার পড়ুয়া ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার ব্যয়বহনসহ সংসারের অন্যান্য ভরণ-পোষণে বর্তমানে মানুষের দ্বারে-দ্বারে সাহায্য সহযোগিতা নেয়ার মাধ্যমে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। বিষয়টি যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করে পরিবারটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *