মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন

পিইসি পরীক্ষায় নানি সুন্দরী বেগম ও তার নাতি

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩০ পাঠক
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় একসঙ্গে অংশ নিয়েছেন ৬৫ বছর বয়সের নানি সুন্দরী বেগম ও তার নাতি। শিক্ষার কোনো বয়স নেই- এ কথা বাস্তবায়ন করলেন তারা।

এ বছর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেন। হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্গাচাষী কৃষক আবুল হোসেনের স্ত্রী সুন্দরী বেগম।

এ দম্পতির চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদিপ্রবাসী, দু’জন ভ্যানচালক। শুধু ছোট ছেলে সাইদুল ইসলামকে কষ্ট করে এইচএসসি পাস করিয়েছেন। ৬ বছর আগে সুন্দরী বেগম বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে যান।

সুন্দরী বেগম কোনো রকম স্বাক্ষর করতে শিখেছিলেন। তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের সামনে ছুড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, যে কোনো মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসবেন তিনি।

পরের দিন নাতি জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ধাইয়ের কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতেন। ৬ বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতির সঙ্গে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন।

সোমবার বাংলা পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমও মনোযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন।

পরীক্ষা শেষে সুন্দরী বেগম জানান, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দুর্ব্যবহারে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিজ্ঞা করে তিনি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমার এবং শ্বশুরের পরিবার অতিদরিদ্র হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করতে পারিনি। সন্তানদেরও পড়াশোনা করাতে পারিনি। তিনি বলেন, ৬ বছরে সব ক্লাস পরীক্ষায় নাতির বয়সী সব শিক্ষার্থী-শিক্ষকের ব্যাপক উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়ে আজ আমি শিক্ষায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।

সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, এ বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেরিয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *