শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৯৫ পাঠক
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। গাছে গাছে ফুটেছে দুরন্ত শিমুল, দূর বনপথে দল মেলেছে পলাশ, পারিজাত। দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা অনন্ত সংগীতস্রোতে নিমজ্জিত হতে চায় মৃত্তিকার বুকে। আনন্দ-জাগানিয়া বাঙলার এই বসন্তের স্বরূপ বন্দনায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লঘুচালে লিখলেন, ‘এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ, যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য’।

উত্তুরে হিমেল হাওয়া থমকে গেছে, বঙ্গে বইতে শুরু করেছে দখিনা বাতাস। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। এই বসন্তে শরীর মন রাঙিয়ে নিতে নাগরিক জীবনও সেজে উঠছে শিমুল-পলাশের রঙে। বসন্ত বরণের দিনে আজ নাগরিকদের পোশাকে থাকবে উজ্জ্বল হলুদ, বাসন্তী বা কমলার ছোঁয়া।

বরাবর ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব উদযাপিত হলেও গতবছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্ত উৎসব এখন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হবে। দিনটি একই সঙ্গে আবার ভালোবাসা দিবসও।

পুরীতে ফাল্গুন মাসে দোলযাত্রা উৎসব হতো, তার অনুকরণে বঙ্গেও প্রবর্তিত হয় বসন্ত উৎসব। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন বা ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। তিনি প্রতিবছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। ১৯০৭ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে শান্তিনিকেতনে যাত্রা শুরু করে বসন্ত উৎসব, যা ‘ঋতুরঙ্গ উৎসব’ নামেই পরিচিত।

স্বাধীন বাংলাদেশে বসন্ত উৎসবের গোড়াপত্তন গত শতকের নব্বইয়ের দশকে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের আন্দোলনে গোটা দেশ যখন উদ্বেলিত, সেই সময়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছোট্ট পরিসরে শুরু হয় বসন্ত উৎসব।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় বানানো রঙিন কাগজের ফুল, প্রজাপতি ও পাখির অবয়ব নিয়ে চারুকলা অনুষদের ৮৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করেন। পরে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সালে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় শুরু হয় বসন্ত উৎসব।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসানের মতে, দিনটি বঙ্গবাসীর এক বৃহৎ মিলন-উৎসব। তিনি বলেন, চারদিক আজ আনন্দে মুখরিত। কী সুন্দর প্রকৃতি। দিকে দিকে পাখি ডাকছে, গাছে নানা রঙের ফুল ফুটছে। জগদ্বাসী আজ আনন্দে মাতোয়ারা। দিকে দিকে নানা উৎসব। সে উৎসব হয়ে উঠছে অনেক মানুষের মেলবন্ধন। নিরানন্দ এই নগরজীবনে এ উৎসবগুলোই তো বাঁচিয়ে রাখছে আমাদের।

প্রকৃতিবিদ মোকাররম হোসেন বলেন, শীতের শেষে নগরে বসন্ত এসেছে। কিন্তু এখনো এই নগর বিবর্ণ, ধুলোমলিন। তবে এই নগর থেকে দূর গ্রামে কিন্তু বসন্তের চারটি প্রধান ফুল পলাশ, পারিজাত, শিমুল আর মাধবী ফুটে আছে। প্রকৃতির এই অনুষঙ্গ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ষড়ঋতুর পরিবর্তন। প্রকৃতির এই উপসর্গ মানব মনেও আনে নানা পরিবর্তন। অথচ ঋতুর এই পরিবর্তনকে উদযাপন করার মতো প্রাকৃতিক কোনো আয়োজন নেই এই শহরে। নাগরিক উৎসবের ভিড়ে প্রকৃতিকে জানা-বোঝার পর্ব থাকে খুব কম।

আজ বুধবার সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে উদযাপিত হবে বসন্ত উৎসব। বরেণ্য সেতারবাদক জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রাগ বসন্ত মুখারী’ বাদনে শুরু করবেন এই উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকার বিভিন্ন সংগীত ও নৃত্য দলের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবেশনা ছাড়াও বসন্তকথন পর্ব আয়োজিত হবে। উৎসবে প্রীতিবন্ধনী ও আবির বিনিময়ের পর্ব থাকছে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সকাল ১০টায় বসন্ত আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসবে। বসন্ত উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে বেলা সাড়ে ৩টায়। বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই পর্ব। গান, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশনা থাকবে এই পর্বেও। প্রতিবছরের মতো এবারও বেলা সাড়ে ৩টায় পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ্ পার্ক ও উত্তরা দিয়াবাড়ীর লেকসংলগ্ন মাঠে বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত উৎসবের আয়োজনটি শুরু হবে বেলা ৩টায়। ঢাকার রমনা পার্কের শতায়ু অঙ্গনে এই আয়োজনে থাকবে আলোচনা সভা ও বসন্ত নৃত্য। পরে একটি শোভাযাত্রা সহযোগে শিল্পীরা যাবেন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

সমগীতের বসন্ত উৎসব শুরু হবে বুধবার সকাল ৯টা থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় এই আয়োজনে গাইবেন কফিল আহমেদ, সায়ান। এ ছাড়া গানের দল লীলার পরিবেশনা থাকবে।

ঢাকার পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশকেন্দ্রে বসন্ত বরণের আয়োজন শুরু হবে বেলা ৩টায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসন্ত বরণের আয়োজনটি শুরু হবে আজ বেলা ১২টায়। শিল্পকলা একাডেমির বাউল শিল্পীরা বাংলার লোককবিদের গান পরিবেশন করবেন।

ছায়ানটের বসন্ত উৎসব উদযাপিত হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। নৃত্য,গীত, বাদ্য আর কথনে সাজানো হবে এই আয়োজনটি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *