মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য : অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুর আত্মহত্যা

শাহজাহান হেলাল, ফরিদপুর । / ৩৯ পাঠক
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় অপবাদ সইতে না পেরে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। ১৬ মে রোববার সকালে ওই গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে মধুখালী থানা পুলিশ।

গৃহবধুর নাম রীমা রানী সাহা (২২)। সে উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের পলাশ কুমার সাহার স্ত্রী। পলাশ সাহা মধুখালী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী। গৃহবধু রীমা ৫মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। শ্বশুর বাড়ি থেকেই রীমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানা যায়, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ কুমার সাহার ছেলে পলাশ কুমার সাহার সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নানবার গ্রামের বাসিন্দা নিশ্চিন্ত কুমার সাহার মেয়ে রীমা রানী সাহার দীর্ঘ চার বছর আগে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সুখে শান্তিতেই সংসার করছিলেন।

সম্প্রতি ‘সুখতারা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে রীমা সাহার নামে বিভিন্ন অপবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে শনিবার ১৫ মে বিকালে শ্বশুর বাড়ির ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সে।

রীমার শ্বশুর প্রভাষ সাহা বলেন, কয়েকদিন আগে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। অপর পাশ থেকে বলা হয়, আমার পুত্রবধুর চরিত্র খারাপ, তার এক যুবকের সাথে পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন খারাপ কথাবার্তা বলে। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে পরিচয় দিতে রাজি হয়নি। তাকে প্রমান দিতে বলি, সে বলে প্রমান যেদিন দিতে পারবো সেদিনই আমার পরিচয় জানতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, এর কয়েকদিন পর আবার ফোন আসে আরেকটি অচেনা নম্বর থেকে, একই কথা বলা হয় আমাকে। বিষয়টি আমি পরিবারের কাউকে জানায়নি, পুত্রবধু অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকেও জানাইনি। এরপর ‘সুখতারা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার নাতিছেলে মেয়ের ছেলে উৎস’র মেসেঞ্জারে পুত্রবধু রীমাকে নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করা হয়। আমার নাতিছেলে প্রমান চাইলে কোনো প্রমান দিতে পারেনি।

প্রভাষ সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে রীমাকে কিছুই বলিনি। কারন কোনো প্রমান পাইনি তাই রীমাকে কিছুই বলা হয়নি। হয়তো অন্য কারো কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারে রীমা। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে রীমা। রীমার আত্মহত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করি।

পলাশের ভাগ্নে উৎস সাহা বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকদিন আগে আমার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ‘সুখতারা’ নামে একটি আইডি থেকে মামী রীমাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলা হয়। আমি প্রমান চাইলে কোনো প্রমান দিতে পারেনি। বিষয়টি মামী জানতে পেরে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য অসিম কুমার সাহা বলেন, প্রভাষ সাহার পুত্রবধু রীমাকে নিয়ে ফেসবুকে কারা যেন আজে বাজে কথা ছড়িয়ে দেয়। এসব কথা সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরো বলেন, এর আগে প্রভাষ সাহার মোবাইলেও ফোন দিয়ে রীমার চরিত্র নিয়ে নানা কথা কথা বলা হয়। ওই মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি যাদের তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে।

রীমার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন মা শিউলি রানী সাহা। তার আহাজারিতে আশ আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কান্নাজড়িত কন্ঠে শিউলি রানী বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। আমার মেয়েকে ওরা হত্যা করেছে। মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানান, রীমার ভাগ্নে উৎস’র সাথে ফেসবুক আইডি ‘সুখতারা’র ম্যাসেঞ্জারে যে কথা হয়েছে, তাতে বলা হয়, এক যুবকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল রীমার। গর্ভের সন্তানও ওই যুবকের। ধারনা করা হচ্ছে ওই আইডি যিনি পরিচালনা করেন তিনি ওই যুবকের বন্ধু অথবা তিনি নিজেও হতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে স্বামী পলাশের সাথে হয়তো রীমার বিবাদ হওয়ায় রীমা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।

এদিকে গৃহবধু রীমার স্বামী পলাশ সাহার সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে তিনি অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম জানান, রীমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে বিষয়টি তদন্তের কাজ করছে পুলিশ। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই বিষয়টি জানা যাবে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া রীমাকে নিয়ে যারা মোবাইলে ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন মন্তব্য করেছে সেই বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যেই অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *