বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

বিএনপির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪১ পাঠক
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

নিউজ ডেস্ক, বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সভায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির রায় ঘিরেই বেশিরভাগ নেতা বক্তব্য দেন। এসময় অধিকাংশ তৃনমূল নেতা দলীয় প্রধানকে অনুরোধ করে বলেন, ‘ম্যাডাম আপনি আন্দোলনের ডাক দিলে যারা বেইমানি করবে, বিশ্বাসঘাতকতা করবে তাদেরকে আপনি ক্ষমা করতে পারবেন না। অতীতে আপনি ক্ষমা করে দিয়েছেন বলেই ষড়যন্ত্রকারীরা সহজেই আমাদের দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এবার বেইমানি করলে কোন ক্ষমা করবেন না।’

শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাড়ে চারশ’র বেশি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। প্রথম অধিবেশন চলে বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত, যা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। দুপুর ২টা থেকে দ্বিতীয় অধিবেশনে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, চলে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত। বৈঠকে উপস্থিত ৪৬৭ জনের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের ৪২ জন নেতা বক্তৃতা করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এবং পরবর্তীতে একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকের বিষয় জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা বলেন, ‘আমাদের তৃণমূলের অধিকাংশ নেতার কথা ছিল (ম্যাডাম) অতীতে যারা আপনার এবং দলের সিদ্ধান্তের সাথে বেইমানি করেছে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, এবার একই কাজ কেউ যদি করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। এটা আমাদের অনুরোধ।’

৮ ফেব্রয়ারি নিয়ে কোন কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৮ তারিখে ম্যাডামকে অন্যায়ভাবে কিছু করা হলে ঢাকাসহ সারা দেশে যে যেখানে থাকবে সেখান থেকেই প্রতিবাদ করার জন্য হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ করা হবে। আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না এমন সিদ্ধান্তও বৈঠকে হয়েছে।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা শেষে দলটির যুগ্ম–মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল রুদ্ধদ্বার বৈঠকের বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা বলেছি বাংলাদেশের কারাগারে কত জায়গা আছে, কত গ্রেফতার করতে পারে সেটার পরীক্ষা দেয়ার সময় এসেছে বিএনপির। সমস্ত জেলায় যার যার এলাকায় সঠিক দায়িত্ব পালন করে রাজপথে অবস্থান নেবে ৮ ফেব্রুয়ারি।’

৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে আলাল বলেন, ‘শুধু ৮ তারিখ নয়, আমরা এখন থেকে নিয়মিত মাঠে থাকবো। ৮ তারিখ রায় ঠিক থাকলে এক রকম হবে। তারিখ পরিবর্তন হলে আরেক রকম হবে।’

আপনারা কি ধারণা করছেন ৮ ফেব্রুয়ারি রায় হবে না? জবাবে আলাল বলেন, ‘অনেক সময় রায়ের তারিখ পরিবর্তন হয়।’

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস সারোয়ার বলেন, ‘আমরা ম্যাডামকে বলেছি আমরা যারা তৃনমূলে রাজনীতি করি অতীতেও আপনার পাশে ছিলাম ভবিষ্যতেও আপনার পাশে থেকে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করবো।’

বিএনপির এই নেতা আরও জানান, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেন তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় ন্যায়বিচার পাবেন। সেটা তিনি নেতাদের জানিয়েছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, ‘দল অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। যত ষড়যন্ত্র হোক না কেনো আমরা এক থাকবো। ম্যাডাম যেখানেই থাকুক তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হলে আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা প্রহসনমূলক মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে যদি কনভিকশন দিয়ে থাকে তাহলে দেশের জনগণ তা মানবে না। সেজন্য যেটা করতে হবে সেটাই আমরা করবো। অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।’

বিএনপির এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘আমরা মনে করি ৮ তারিখ যদি কোনো ষড়যন্ত্রমূলক রায় দেয়া হয় তাহলে সবাই রাজপথে নামবো যাতে কোনো ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে না পারে। নেত্রী সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহবান জানিয়েছেন।’

তবে নেতাদের বক্তব্য শোনার পর প্রায় তিন মিনিটের সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার হারানোর কিছুই নেই। রাজনীতির জন্য স্বামী, মা, সন্তানকে এমনকি বাড়ি হারিয়েছি। আমার এক সন্তান বিদেশে আছে। আপনারাই আমার আশা। আপনাদের নিয়েই আমি রাজনীতি করছি। আমি ভীতু নই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে চলবে। আপনারা অনেক পরিশ্রম করছেন। আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কারো ভাই, ছেলে, বোন, বাবা হারিয়েছে। এখন নতুনদের এগিয়ে আসতে হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা হঠকারী কোনো কিছুতে পা দেবেন না। দলকে বিপদে ফেলার মতো কিছু করবে না। সবাই একতাবদ্ধ থাকবেন। এবার যদি কেউ দলের বিরুদ্ধে কিছু করে থাকে তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে কোনো পদ দেয়া হবে না। আমার বিশ্বাস সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে শক্তিশালী করবেন।’

এছাড়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সাথে বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে, তাদের কোনো মূল্যায়নের জায়গা নেই। এদের তারাও (সরকার) নেবে না, আমরাও নেবো না। ক্ষমা কিন্তু একবার হয়, বার বার হয় না।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *