বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

বিদায়ী বছরজুড়ে রহস্যময় গুম ৯১

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪০ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,সোমবার,০১ জানুয়ারী, ২০১৮ :
ফিরেছেন ২৬ জন, সন্ধান নেই ৬৫ জনের ** ৮১৮ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ** ক্রসফায়ারে মারা গেছে ১৬২ জন ** বছরটি ছিল ‘চরম উদ্বেগজনক’

বিদায়ী বছরে দেশে ‘গুম’ নিয়ে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ৯১জন নিখোঁজ (গুম) হয়েছিলেন, তার মধ্যে ৬৫জনের সন্ধান এখনও মেলেনি। যা আগের কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান দিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে, সার্বিক পরিস্থিতি ‘চরম উদ্বেগজনক’।

বছরের শেষ দিন গতকাল রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে আসকের সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, ২০১৭ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার পাশাপাশি এ বছর বিভিন্ন পেশার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। সংবাদ সম্মেলনে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, সিনিয়র উপ-পরিচালক রওশন জাহান পারভীন ও নীনা গোস্বামী উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আসক গুম, খুন, নিখোঁজের এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার শিকার হন ৬০জন। এর মধ্যে দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়, আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়, পরিবারের কাছে ফেরত আসে সাতজন। বাকি ৪৩জনের খোঁজ মেলেনি এখনও।

এছাড়া ‘রহস্যজনক’ নিখোঁজের সংখ্যা আরো ৩১ বলে জানিয়েছে আসক। তাদের মধ্যে ৯জন ফেরত এলেও তাদের ছয়জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, পরিবারে ফিরেছেন তিনজন।

বছরটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও বরাবরের মতো উদ্বেগ জানিয়েছে আসক। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‘ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়’ এবং হেফাজতে মোট ১৬২জন নিহত হন। এর মধ্যে ‘ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ ও গুলিবিনিময়ে’ নিহত হন ১২৬জন। বাকিদের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ১২জন, গ্রেপ্তারের আগে ও পরে ১৮জন, গ্রেপ্তারের পর আত্মহত্যায় একজন, অসুস্থ হয়ে চারজন এবং একজনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এছাড়া কারাগারে ৫৩জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ৩৩জন হাজতি ও ২০জন কয়েদি ছিলেন।

বিদায়ী বছরটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জন্যও ‘উদ্বেগজনক’ ছিল বলে মন্তব্য করেন ফয়জুল কবির। তিনি বলেন, এ বছর হিন্দু সমপ্রদায়ের ২১২টি প্রতিমা, ৪৫টি বাড়ি-ঘর, ২১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত ও ৬৭জন আহত হন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারার অপব্যবহার এবং মতপ্রকাশের বাধা দেওয়ার ঘটনার কথাও আসে আসকের প্রতিবেদনে। ফয়জুল কবির বলেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিক, লেখকসহ ৫৪জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দ্বারা ১২২জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতন, হামলা, হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। গেলো বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কর্মস্থলে যৌন নির্যাতন ও বখাটে দ্বারা উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বেড়েছে বলে আসকের পর্যবেক্ষণ।

ফয়জুল কবির বলেন, যৌন হয়রানিসহ সহিংসতার শিকার হন ২৫৫জন। এর মধ্যে ১২জন নারী আত্মহত্যা করেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারীসহ ১৩জন খুন হয়েছেন, বখাটেদের প্রতিবাদ করায় লাঞ্ছিত হয়েছেন ১৬৮জন ও চার মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ধর্ষণের হাত থেকে এবার শিশু কিংবা বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি। গেলো বছর সারাদেশের ৮১৮জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যা ২০১৬ সালের চেয়ে বেশি। সে বছর ধর্ষণের শিকার হন ৬৫৯জন। গেলো বছরে সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে ১০জন নারী নির্যাতনের শিকার হন জানিয়ে ফয়জুল কবির বলেন, এসব ঘটনার মধ্যে গ্রামছাড়া, সমাজচ্যুত ও একঘরে করে রাখার ঘটনা ঘটেছে তিনটি, হিল্লা বিয়ে ও দোররার শিকার হয়েছেন আরো তিনজন নারী। এছাড়া শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন চারজন।

২০১৭ সালে ৩০৩জন নারী যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ১৪৫জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০জন আত্মহত্যা করেন। এসব ঘটনায় ১৮৮টি মামলা হয়েছে। এছাড়া গেলো বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন ৪৪১জন নারী। এদের মধ্যে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যদের দ্বারা ২৭০জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নিজ পরিবারে হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪ নারী এবং নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করেন ৫৭জন নারী। এসব ঘটনায় ২৩৮টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসক।

অন্যদিকে এবার ৪৩জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, এর মধ্যে ২৬জন গৃহকর্তার বাড়িতে মারা যান। অ্যাসিডের শিকার হন ৩২ নারী, এর মধ্যে একজন মারা যান। গেলো বছর এক হাজার ৬৭৫ শিশু হত্যা ও বিভিন্নভাবে নিযাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে আসক। এর মধ্যে ৩৩৯ শিশু হত্যা করা হয়, আত্মহত্যা করে ১১৭ শিশু।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *