শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

বিশ্বব্যাংকের ঋণ: সুদের হার ২ শতাংশ, পরিশোধ ৩০ বছরে

নিউজ ডেস্ক | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম- / ৪৫ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরকালে বাংলাদেশের ৪টি প্রকল্প এবং বাজেট সহায়তা হিসেবে একটি কর্মসূচিতে মোট পাঁচটি প্রকল্পে ২২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়েছে। সার্ভিস চার্জসহ এই ঋণের সুদের হার হবে ২ শতাংশ; পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক দিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি সই হয়নি।

গত ২৯ এপ্রিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকরে কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এতে সই করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত সোমবার বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের উপস্থিতিতে এসব ঋণচুক্তি বিনিময় হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পাঁচটি ঋণের মধ্যে ৪টি প্রকল্পে ১৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ঋণ সম্পূর্ণ আইডিএ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলারে মধ্যে ১৭ কোটি ডলার আইডিএ সহায়তার মধ্যে থাকবে। বাকি ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার স্বল্পমেয়াদি ঋণ, যা ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে ঋণের এ অংশে কোনো সার্ভিস চার্জ বা সুদ নেই।

ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) হলো কম সুদে নমনীয় ঋণ প্রদান বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যার সবচেয়ে বড় গ্রাহক বাংলাদেশ। আইডিএ ঋণের সার্ভিস চার্জ শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সুদহার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। অ–উত্তোলিত অর্থায়ন স্থিতির ওপর বছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি অব্যাহতি ৫ বছর। আর পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে ।

স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চার হাজার কোটি ডলারের বেশি আইডিএ ঋণ নিয়েছে। বর্তমানে দেশের চলমান প্রকল্পগুলোতে আইডিএ তহবিল রয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ নিম্ন–মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আগে যখন নিম্ন আয়ের দেশ ছিল, তখন আইডিএ ঋণে শুধু শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ছিল। অন্যদিকে ১০ বছরে গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করার নিয়ম ছিল।

কোন প্রকল্পে কত ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

১. বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি রিডাকশন বা রিভার প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, সহনশীল ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক মানুষকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং দুর্যোগ প্রশমনে দেশের সক্ষমতার উন্নয়ন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ৩০ জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

২. বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনিবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন বা বেষ্ট প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৫ কোটি ডলার। পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের যৌথ বাস্তবায়নে এ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় সরকারের সক্ষমতা বাড়ানো এবং দূষণ কমানো হবে। এর মেয়াদকাল ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।

৩. অ্যাক্সিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (অ্যাক্সেস)– বাংলাদেশ পর্যায়–১ প্রকল্পে ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এনবিআর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পরিবহনের উন্নয়ন।

৪. সাসটেইনেবল মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন বা স্মার্ট প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি ডলার। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য জলবায়ু–সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রসারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। পিকেএসএফ ২০২৩ থেকে ২০২৮ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

এবং

৫. ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট বা জিসিআরডি কর্মসূচিতে ৫০ কোটি ডলারে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করা। কিছু শর্ত পালন সাপেক্ষে আগামী অর্থবছরে এ অর্থ ছাড় করবে বিশ্বব্যাংক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *