বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন

মৌলভীবাজারে পাঁচবছরে হামলা-মামলায় সাংবাদিকরা কোণঠাসা!

বর্তমানকন্ঠ ডটকম, মৌলভীবাজার। / ৫০ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন

সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তারা বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে দেশ ও জাতির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। কিন্তু বর্তমানে দমন-পিড়ন কৌশলে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজারে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের হুমকি, নির্যাতন, হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়েছেন অনেক গণমাধ্যমকর্মী।

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বাংলা ট্টিবিউন, দৈনিক জনতা, সাপ্তাহিক পাঁতাকুড়ির দেশ পত্রিকার সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিলের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে এক রাতে নিজ বাসায় ফেরার পথিমধ্যে ক্যাথলিক মিশন রোড এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তুলে নিয়ে জেল হাজতে চোখ বেধে নির্যাতন চালায়। এছাড়া প্রেসক্লাব সভাপতি গোপাল দেব চৌধুরী ও সাইফুলের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মানহানির মামলা করা হয়। তাছাড়া দৈনিক যায়যায়দিন ও জিটিভির সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ মাদক, জুয়া ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।এর কারনে দুলাল মিয়া নামে জনৈক ব্যক্তি সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ ও পারভেজ মিয়ার নামে আদালতে চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টাসহ দুটি মামলায় জড়ানো হয়। এদিকে বাংলা নিউজ২৪ ডটকমের সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন আশীদ্রোন ইউনিয়নের শিববাড়ি এলাকার মেম্বার বাদশা মিয়া ও তার পুত্র গাছ চোর নাসিরের কবল থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই গাছ উদ্ধারকৃত গাছের ছবি তুলতে গেলে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে সাংবাদিকের উপর হামলা চালিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে। অন্যদিকে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিক্ষন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মোঃ মামুনুর রশিদের উপরো নির্বাচনী কেন্দ্রে মারামারি মামলায় আসামী করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারস্থ নিজ অফিসের সম্মুখে প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় ও দৈনিক নতুন দিন পত্রিকার সাংবাদিক আলমগীর হোসেন এবং তার বোনের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। উপজেলার জামশেদ হোসেনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া ভাতা উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশ হলে জামশেদ ক্ষিপ্ত হয়ে আলমগীরকে প্রাণে হত্যার জন্য হামলা চালায়। তাছাড়া উপজেলার সাপ্তাহিক পূর্বদিক পত্রিকার সাংবাদিক ফটিকুর ইসলাম রাজু’র উপর চলন্ত মোটরসাইকেলে হামলা চালায় ট্রাক্টর চালক কাশেম মিয়া। অন্যদিকে সাংবাদিক আব্দুল বাছিত খান রামচন্দ্রপুর এলাকার রইছ মিয়ার বাড়ীতে প্রতারণামূলক এক বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলে তার উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ ঢাকার বিশেষ আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় ডিগ্রি কলেজের দুই শিক্ষক আটক ও মুচলেকা দিয়ে মুক্ত শিরোনামে অপরাধ অনুসন্ধান অনলাইনে সংবাদ প্রকাশে মামলা হয়। প্রেসক্লাব সম্পাদক সমাজকর্মী শাহীন আহমদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজয়ী চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা’র অনুগত সন্তাসীরা কুমড়িবিল পুলের উপর হামলা চালায়।
বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার এলাকার দুই গ্রাম সুড়িকান্দি ও লঘাটির মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় থানার এসআই সুব্রত কুমার দাস রহস্যজনক ভাবে দৈনিক সোনালী খবর, প্রিয়সিলেট২৪ ডটকম সাংবাদিক মস্তফা উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ৫০ জনের নাম উল্লেখ ও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করে। সাংবাদিক আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি জেলহাজতে রয়েছে।

জুড়ী উপজেলার অনলাইল প্রেসক্লাব সভাপতি ফ্রিল্যান্স ক্রাইম জার্নালিস্ট এস এম জালাল উদ্দীন ও দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক কল্যাণ প্রসূন চম্পুর উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়।

কুলাউড়া উপজেলার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক আজিজুল ইসলামের উপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি ও পরে সন্ত্রাসী হামলা করে। এছাড়া কুলাউড়া রেলওয়ে কোয়ার্টারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারী চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিক ইউসুফ আহমদ ইমন ও স্থানীয় সীমান্তের ডাক পত্রিকার সাংবাদিক এস আলম সুমনকে মোবাইল ফোনে আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে মতিউর রহমান হুমকি দেয়।

রাজনগর উপজেলার দৈনিক যায়যায়দিন ও উত্তরপুর্ব পত্রিকার সাংবাদিক ফরহাদ হোসেনের উপর সংবাদ প্রকাশের জের ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্র হামলা করে।

মৌলভীবাজার সদরে কর্মরত সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে পেশার দায়িত্ব পালন করেছে। জেলার প্রভাবশালী দূর্নীতিবাজ সাইফুল ইসলাম সজিব এনটিবি সাংবাদিক এসএম উমেদ আলী, সাংবাদিক আজিজুল হক বাবুল ও আবদুল মালেক মনির বিরুদ্ধে হুমকি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। এই মামলার প্রেক্ষিতে সংবাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সাংবাদিক সৈয়দ মহসিন পারভেজ ও মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে একাধিক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও ৫৭ ধারায় মামলা এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন সজিব। এছাড়া সন্ত্রাসীর হাতে নিহত সৈয়দ ফারুক আহমদের বড়ছেলে নয়াআলো ডটকম, দৈনিক নিরপেক্ষ সংবাদ, যোগাযোগ প্রতিদিন, স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার সাংবাদিক সৈয়দ মুন্তাছির রিমন প্রভাবশালী ও পুলিশের দূর্নীতি, অনিয়ম, অবৈধ কার্যকলাপ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সংবাদ প্রকাশ এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকালে হুমকি-দামকি, হামলা-মামলার শিকার হন। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন নির্বাচনে চাঁদনীঘাট এলাকায় নির্বাচন পরিদর্শনকালে পূর্বে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য প্রভাবশালী চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান মোঃ রব্বান উল্লা বাহিনীর হামলায় আহত হন ও নির্বাচন চলাকালীন সময় মারামারি করার অভিযোগে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর সাথে আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান আজির উদ্দীন ও পুলিশের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশের জন্য সাংবাদিকের বাসা-অফিসে পুলিশী তল্লাশি চালিয়ে তার ভাই সৈয়দ রাহাদকে ধরে নিয়ে জেল হাজতে নির্যাতন করে। এমনকি বড়লেখার দুই গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় তাকে জড়ানো হয়। তাছাড়া মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক, দৈনিক আমাদের কন্ঠ, সিলেটবানী পত্রিকার সাংবাদিক মশাহিদ আহমদকে সেন্ট্রাল রোডস্থ এক দোকানে বসে ভয়ংকর ভাবে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। একদল সন্ত্রাসীরা তার চলাফেরার সময় প্রানে হত্যার সুযোগ খুজেঁ। দুই শিক্ষক আটক ও মুচলেকা দিয়ে মুক্ত শিরোনামে অনাবিল ডটকম অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মশাহিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এদিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দৈনিক ভোরের দর্পন পত্রিকার সাংবাদিক সৈয়দ ফয়েজ আলীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিতু তালুকদার প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। পরে তার উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে। অন্যদিকে ফয়েজকে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় জড়ানো হয়। দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সাংবাদিক শ.ই সরকার জবলু’র উপরো নির্বাচন চলাকালীন সময় ভোট কেন্দ্রে মারামারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
বর্তমানে প্রতিকুল পরিবেশে জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়ে কোন কোন সাংবাদিক নিসক্রীয় কেউ কারাগারে বন্দী আবার কেউ আদালতের সাজা প্রাপ্ত হয়ে দেশান্তরিত হয়েছেন। তাই গণতন্ত্র, মানবতা, আইন-শৃঙ্খলা ও বাক-স্বাধীনতার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী তুলেছেন সচেতনমহল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *