শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

শাহ আমানতে বিমান ওঠানামা ঝুঁকিতে

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৬ পাঠক
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,বৃস্পতিবার,০৪ জানুয়ারী, ২০১৮ : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঝুঁকি নিয়ে বিমান উঠানামা করছে। সাত মাস ধরে একই পথে বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইট উঠানামা করছে। এ সমস্যার কথা বিশ্বের সব বিমানবন্দরে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তারা।

সূত্র মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্লাইট উঠানামার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের ট্রাফিক সিস্টেমও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কর্ণফুলী ট্যানেল নির্মাণ কাজের জন্য ৩৯ মিটার উচ্চতার ক্রেন বসানোর কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। রানওয়ের উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ফ্লাইটটি অবতরণ করার কথা থাকলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছেনা। পতেঙ্গা বোট ক্লাবের পাশে পূর্বদিক থেকে এ ফ্লাইটটি অবতরণ এবং আরোহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ জানান, প্রায় সাত মাস আগে এ পরিস্থতি সৃষ্টি হলে সংকট সমাধানে একটি কমিটি গঠন করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। পরে কমিটির সুপারিশ অনুয়ায়ী একই পথে বোয়িং ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ করানোর সিদ্ধান্ত নেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ট্যানেল নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ক্রেন বসিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ট্যানেল নির্মাণ কাজের জন্য কিছুদিন পর ৬০ মিটার উচ্চতার আরও একটি ক্রেন বসানো হবে বলে তথ্য পেয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি বসানো হলে সংকট আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন সিভিল এভিয়েশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কর্মকর্তা আরও জানান, পূর্বদিকে একই পথ দিয়ে এ ফ্লাইটটি ঝুঁকি নিয়ে উঠানামা করছে। যে সময় বোয়িং ৭৭৭ উড্ডয়ন (পূর্বদিকে) করে সে সময় অন্য কোনো এয়ারক্রাফট অবতরণ করতে পারে না। দেখা যায়, বোয়িং ৭৭৭ উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও তখন পূর্বদিকের রানওয়ে দিয়ে একটি ফ্লাইট অবতরণের অপেক্ষায় আছে।

এসময় বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইটকে এক পাশে (উত্তর দিকের রানওয়ে) দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। আবার বোয়িং উড্ডয়নের মুহূর্তে অবতরণের জন্য আরেকটি ফ্লাইটকে আকাশে অপেক্ষমান রাখতে হয়। পাশাপাশি ফ্লাইট পরিচালনায়ও প্রচণ্ড চাপ পড়েছে এয়ার ট্রাফিক সিস্টেমেও।

জানা গেছে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে ৭০টি অভ্যন্তরীণ ও ২০ আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে। তবে রানওয়ের পিসিএন (পেভমেন্ট ক্লাসিফিকেশন নম্বর) কম থাকায় পুরো ওজন নিয়ে অবতরণ করতে পারে না বোয়িং ৭৭৭।

বর্তমানে বিমানবন্দরের রানওয়ের দের্ঘ্য ৯ হাজার ৬৪৬ ফুট। ভবিষ্যতে ২ হাজার ৩৫৪ ফুট সম্প্রসারণ করে রানওয়ের মোট দৈর্ঘ্য করা হবে ১২ হাজার ফুট। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১২ হাজার ফুট হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এয়ারবাস-৩৮০ ও বোয়িং ড্রিম লাইনার অবতরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবীর।

এদিকে এ বিমানবন্দর দিয়ে বেড়েছে ফ্লাইট উঠানামা। একইসঙ্গে বেড়েছে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীও। কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে, বিদ্যমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের আয়তন ১৮ হাজার বর্গমিটার। এটির ধারণক্ষমতা বছরে পাঁচ লাখ ২০ হাজার যাত্রীর। কিন্তু বর্তমানে ১৩ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। কিন্তু বাড়েনি টার্মিনালের আয়তন। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ রুটের বিপুল পরিমাণ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। আগের তুলনায় প্রতিদিন অতিরিক্ত যাত্রী বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ জন।

যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবীর বলেন, ‘প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল সম্প্রসারণের জন্য কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। বুয়েটের একটি টিম ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে। তবে শিগগির ওয়েটিং লাউঞ্জ সম্প্রসারণ করা হবে।

এদিকে সিভিল এভিয়েশনের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা না করেই কর্ণফুলী ট্যানেল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে সেতু বিভাগ। সাত মাস আগে বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় ৩৯ মিটার উচ্চতার একটি ক্রেন স্থাপন করলে হঠাৎ করে বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইট অবতরণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

এসময় টানেল নির্মাণের সাথে যুক্ত প্রকৌশলীদের ডেকে এনে তাদের কাছে কৈফিয়ত চান সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করে বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, উন্নয়ন হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু পরিকল্পিত এবং সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করলে বোয়িং ৭৭৭ অবতরণের ক্ষেত্রে এ সমস্যা তৈরি হতো না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *