শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

সিলেটে জাতীয় নির্বাচনের প্রচার শুরু: প্রধানমন্ত্রীর নৌকায় ভোটের ওয়াদা

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৭ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

সিলেট,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনসভায় উপস্থিত জনতাকে ওয়াদা করালেন। আজ মঙ্গলবার বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ ওয়াদা করান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর মাসে হবে, আমরা আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকায় ভোট দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সারে ভর্তুকিসহ কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে উন্নয়ন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় না আসতাম, তাহলে এই উন্নয়ন দেখতে পেতেন না। লুটেরারা এলে লুটপাট করত, লুট করে খেত।’
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা অতীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। উন্নয়নের জন্য আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হব। আর ২০৪১ সালে আমরা হব উন্নত দেশ। ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না, বলেছেন জাতির পিতা।’

এর আগে সিলেট সার্কিট হাউস থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় উপস্থিত হন। এ সময় নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনিও হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। বিকাল ৪টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন।
অবশ্য জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভা বেলা সোয়া ১টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লুৎফুর রহমান। এরপর জেলা ও মহানগর এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন।
জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসেন। দুপুরের আগেই কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে যায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। মাদ্রাসা মাঠ ছাপিয়ে জনস্রোতত মিশেছে আশপাশের সড়কে। হাতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে তারা স্লোগানের পর স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলেন।

এর আগে গতকাল বেলা ১১টায় সিলেট বিমানবন্দরে সফরসঙ্গীদের নিয়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত শাহপরান (রহ.) ও হজরত গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.)’র মাজার জিয়ারত করেন। এরপর বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সিলেট সার্কিট হাউসে নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে বিকাল ৩টায় সমাবেশস্থলে আসেন। এরপর একে একে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সমাবেশমঞ্চে বসেন তিনি।
আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরুর ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করে আমরা আজ পাঁচ বছরে পদার্পণ করেছি। সামনে আমাদের নির্বাচন। এই ২০১৮ সালের শেষে দিকে নির্বাচন হবে। নির্বাচন সামনে রেখে আমরা পাঁচ বছরে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিলাম। আর শুরুটা আমরা আজকে করছি সিলেট থেকে, যেখানে আমাদের হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.)-এর পুণ্যভূমি।’

প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের সুনাম হয়, বাংলাদেশ পুরস্কার পায়। অপরদিকে আপনারা দেখেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় বাংলাদেশ তিরস্কৃত হয়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ এটাই হয়ে যায় তাদের মূল কাজ। আমরা আজকে এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশের উন্নয়নে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ যদি পুনরায় ক্ষমতায় না আসত, তাহলে দেশে এত উন্নতি হতো না। উন্নয়নের ছোঁয়া আপনারা পেতেন না। দেশবাসী পেতেন না। কারণ লুটেরা আসে লুটপাট করে খেতে। আর ওই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাতে।’

টানা দুই মেয়াদের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। তাই আপনাদের কাছে আমাদের আহ্বান, অতীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তার স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সম্মান পেয়েছে। আগামীতেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী সিলেটের প্রয়াত নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সমালোচনা করে বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ এ বিষয়ে খালেদা জিয়া আর তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ভিক্ষা পাওয়া যাবে না। এই কথা শুনে আমি বলেছিলাম, আমরা ভিক্ষা করে চলতে চাই না, কারও কাছে হাত পেতে চলতে চাই না। আমরা বিজয়ী জাতি। মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে চলতে চাই।’
সিলেটে উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কাজ করে দিচ্ছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার এবারের সফরে সিলেটবাসীর জন্য উপহার হিসেবে ৩৮টি প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে পিরিজিপুরে সার পরীক্ষাগার ও গবেষণা ভবন, হজরত গাজী বোরহান উদ্দিন (রহ.) এর মাজার উন্নয়ন, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২ তলা বিশিষ্ট ভবন, সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক উন্নয়নসহ ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা হল নির্মাণ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল ভবন নির্মাণ, সিলেটে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল নির্মাণ, সিলেট-গোলাপগঞ্জ-চারখাই-জকিগঞ্জ মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটার উন্নয়নসহ মোট ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মেসবাহউদ্দীন সিরাজ, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান, রফিকুর ইসলাম, সৈয়দা জেবুন্নেসা হক প্রমুখ। এছাড়া স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জের আবু জাহির, মৌলভীবাজারের নেসার আহমদ, সুনামগঞ্জের মতিউর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন যৌথভাবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ আসাদউদ্দীন আহমদ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *