বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন

স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়েছে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩২ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,বৃহস্পতিবার,২২ মার্চ ২০১৮:
হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসের সেরা অর্জন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া বাংলাদেশ। এক সাগর রক্ত আর ধ্বংসস্তূপের ওপর পুরাণের ফিনিক্স পাখির মতো পুনরুত্থিত রূপকথার মতো এক জনগোষ্ঠী। বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াই নিত্য সহচর যাদের। সঙ্গে বন্যা, খরা, ঝড়, জলোচ্ছাস, দুর্ভিক্ষ তো ছিলই। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের যখন জন্ম হলো, তখন নবীন এ দেশটিকে বিশ্ব পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাম দিয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর নজর পেত বাংলাদেশ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন ছিল দেশকে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে তুলে ধরার। এ স্বপ্নপূরণের পথে বড় একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে এ স্বীকৃতিকে। ২২ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে মহতী এ অর্জনের আনুষ্ঠানিক উদযাপন শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জনের উদযাপন। শেখ হাসিনার ঘোষণার পর ঢোলের বাদ্যে সূচনা হয় উৎসবের।
সাত দিনের এ উৎসবের উদযাপন চলবে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে সিক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় জাতিসংঘের স্বীকৃতিপত্র।

বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি উৎসব। তাতেও প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন। এ ছাড়া ঢাকার ৯টি স্থান থেকে ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রা করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে ¯^ল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাতিন সূচকের শর্ত ধারাবাহিকভাবে পূরণ করায় প্রায় ৪৩ বছর পর উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা পেল বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দেয়।
ংবাংলাদেশের এ সাফল্য অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা এ দেশের সাধারণ মানুষের। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী কর্মী, নারীসহ সমাজের সব অংশের মানুষের পরিশ্রমে উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অকুণ্ঠভাবে জনগণের সেই অনবদ্য অবদানকে দিলেন স্বীকৃতি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিকে জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এ অর্জন আমরা যারা সবাই একযোগে কাজ করেছি, যারা উন্নয়নে অবদান রেখেছে; সবার অর্জন, বাংলাদেশের জনগণের অর্জন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সব জনগণই হচ্ছে মূল শক্তি। এই জনগণই পারে সব রকম অর্জন করতে।’

বাংলাদেশের এ অর্জনের পথটা মসৃণ ছিল না। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সামরিক শাসনের দীর্ঘ কালো ছায়ায় ঢেকে যায় গণতন্ত্র। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর দেশে আবার সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে। তবে রাজনৈতিক হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও এ দেশের অগ্রযাত্রাকে বারবার করে থমকে দেয়। এত কিছুর পরও এ দেশের কয়েক কোটি কৃষক অন্নদাতার ভ‚মিকায় পুরো জাতির খাদ্য চাহিদায় শুধু মেটায় না খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। চল্লিশ লাখের বেশি পোশাক শ্রমিক যাদের একটা বড় অংশই নারী তাদের হাড় ভাঙা পরিশ্রমে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ৮০ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিটেন্সে গতিশীল রয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক চাকা। এর ওপর ভর করেই তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো অবকাঠামো। নিজেদের অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ অন্য অবকাঠামো। এ ছাড়া ওষুধ, চামড়া, চাসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ধারাবাহিকভাবেই ছুটছে।

সব ঠিকঠাক মতো চললে আগামী ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। সে সামর্থ্য বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে। যেখানে দুটি সূচক অর্জন করলেই উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মেলে, সেখানে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তিন সূচকেই সাফল্য অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের সেরা সম্পদ এ দেশের সাধারণ মানুষ। বারবার করে তারা সব রকম প্রতিক‚লতার পেরিয়ে ঠিকই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে ঠিকই বাংলাদেশের জনগণ ঠিকই এ দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।

এ অর্জনে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও, ইউএস এইডের প্রশাসক মার্ক গ্রিন এবং জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা। সাত দিনের এ উদযাপনের উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়ুক জনগণের মাঝে। থ্রি চিয়ার্স ফর বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *