শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন
বিংশ শতাব্দিতে বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলার স্বাধীনতা আর লাল-সবুজের পতাকা। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির অহংকার ও গর্বের বিষয়। দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এদেশের বীর বাঙালী যুদ্ধ করে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো জাতীয় অহংকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতেই ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের বহুদিনের। ২০০৪ সাল থেকে এ দাবি জানিয়ে আসছেন মুক্তিযোদ্ধারা। সরকারের সংশ্লিষ্টরা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করলেও দেড় দশক ধরেই উপেক্ষিত রয়েছে এই দাবি।
অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় দুই দশকের দাবি পূরণ করতে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে তা পালনের প্রস্তাব করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটির এই প্রস্তাবে একমতও প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় তোলার কথা থাকলেও এবারও ১লা ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াই পালিত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা দিবস।
২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সমাবেশ করে ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছিলেন জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব দিবসটির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, “কয়দিন পর মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো জীবিত থাকবেন না। কিন্তু দিবস থাকলে সেটিকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে তাদের স্মরণ করার একটা সংস্কৃতি চালু হবে। সেটা ইতিহাসের জন্য জরুরি। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সেটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।”
আগামী বছরই মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি হবে, যা বাংলাদেশের জন্য অহংকারের। এরই মধ্যে বহু বীর মুক্তিযোদ্ধারা বয়সের কারণে আমাদের ছেড়ে গেছেন ও যাচ্ছেন। দিবসটি থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁদের সারা বছর যেমন স্মরণ করবে, তেমনি এই নির্ধারিত দিনেও তাঁদের জীবনকথা আলোচিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আমরা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস আর শৌর্যে বিজয় অর্জন করেছি। এই মাসের প্রথম দিনে তাঁদের স্মরণের দিবসটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ হবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একসাগরের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ও লাল-সবুজের পতাকা প্রতিষ্ঠিত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বার্ধক্যের কারণে দিনে দিনে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণীয় করে রাখতে বিজয়ের মাসের প্রথম দিনটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবী যৌক্তিক।
মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আর কষ্টে জন্ম বাংলাদেশের। অথচ সেই মুক্তির নায়কদের সম্মান ও স্মরণ করার নির্দিষ্ট একটি দিন নেই বাংলাদেশে। ২০০৪ সাল থেকে ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন মুক্তিযোদ্ধারা। সরকারের সংশ্লিষ্টরা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করলেও দেড় দশক ধরে উপেক্ষিত রয়েছে এই দাবি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই এই দাবির বাস্তবায়ন করা উচিত। বিজয়ের মাসের প্রথম দিন ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা সরকারের উচিত। দেশমাতৃকার বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের এখনও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে না। ১ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের যে দাবি উঠেছে এই দাবি যৌক্তিক।
আমরা প্রতিদিন কত দিবসই পালন করি। তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও একটি দিবস থাকলে তারা আরও বেশি সম্মানিত হবেন। মুক্তিযুদ্ধ দিবস জাতীয়ভাবে পালন করতে পারলে নতুন প্রজন্ম অন্ত:ত এই দিনটিতে হলেও দেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকার দীর্ঘ সময়েও মুক্তিযোদ্ধাদের এই দাবি মেনে না নেয়া দু:খজনক ও হতাশা ব্যঞ্জক।
নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা, একটি স্বাধীন দেশের জন্য কতটা ত্যাগ-তিতিক্ষা-মূল্য দিতে হয়েছে সেই ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মুক্তিযোদ্ধা দিবস প্রয়োজন।
জাতীয় বীরদের সঠিক মর্যাদা ও সম্মান দিতে না পারলে জাতির ইতিহাস ও অগ্রগতি থমকে যাবে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সকলের। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে প্রতিটি বাঙালির। ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে আমাদের সকলকে। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে, মুক্তিযোদ্ধা দিবসকে দিতে হবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য একাজগুলি করা অত্যন্ত জরুরী।
[ মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহ্বায়ক, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন ]