সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:১০ অপরাহ্ন
ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লু-লেস হত্যা মামলায় ৪৮ ঘন্টার মাথায় ০৫ জন আসামী গ্রেফতার এবং ভিকটিমের মোবাইল উদ্ধার।
১১ আগস্ট মোঃ সোহেল মাহমুদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হাজীগঞ্জ সার্কেল, চাঁদপুর এবং মোহাম্মদ শহীদ হোসেন, অফিসার ইনচার্জ, ফরিদগঞ্জ থানা, চাঁদপুর, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ)/মোঃ রুবেল ফরাজী ফরিদগঞ্জ থানা প্রাঙ্গনে জানান, গত ০৮/০৮/২০২১খ্রিঃ তারিখ দুপুর অনুমান ০১.৩০ ঘটিকার সময় স্থানীয় লোকজনের মারফতে জানা যায় যে, ফরিদগঞ্জ থানাধীন ১১নং পুর্ব চরদুখিয়া ইউনিয়নের পুর্ব একলাশপুর গ্রামের গুপ্তের বিলে একটি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞাতনামা লাশটিকে উদ্ধার করে। স্থানীয় মোঃ আকরাম হোসেন বাবলু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের পরিহিত কাপড় চোপড় এবং ডান পায়ের মধ্যম আঙ্গুল দেখে মৃত দেহটি তাহার ছোট ভাই হাবিব মৃধা(৩০)বলিয়া শনাক্ত করেন। তারপর থানা পুলিশ লাশটির সুরতহাল প্রস্তুত পুর্বক মৃতের মূল কারণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিমের ভাই মোঃ আকরাম হোসেন বাবলু বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করলে ফরিদগঞ্জ থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-১০/০৮/২০২১, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
এর পরপরই পুলিশ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে। মৃত হাবিব মৃধা(৩০) গত ০৪/০৮/২০২১খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যা হইতে নিখোঁজ ছিল। সে প্রায় সময় কিছু দিন অজ্ঞাত স্থানে চলে যেত এবং কিছু দিন পর আবার ফিরে আসত বলিয়া তাহার পরিবার সূত্রে জানা যায়। থানা পুলিশের তদন্তকালে একপর্যায়ে জানা যায়, জনৈক প্রবাসীর স্ত্রী শিউলী আক্তার(২০), স্বামী-মোঃ ফারুক হোসেন, পিতা-রুহুল আমিন ঢালী, মাতা-রাবেয়া বেগম, সাং-হর্নিদুর্গাপুর, গ্রাম-এখলাছপুর, থানা-ফরিদগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর ভিকটিম মৃত হাবিব মৃধার সাথে পরকিয়া সম্পর্ক ছিল। তার সূত্র ধরে থানা পুলিশ শিউলী আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। শিউলী আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জানা যায়, তাহার সাথে মৃত ভিকটিম হাবিব মৃধার, অত্র মামলার মূল আসামী মোঃ রুবেল, মোঃ রাসেলদের সাথেও তার পরকিয়া সম্পর্ক ছিল। শিউলীর একাধিক পরকিয়ার বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম হাবিব মৃধা, রুবেল, এবং রাসেলদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে নিহত হাবিব মৃধা রুবেল এবং রাসেলকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে শিউলীর জীবন থেকে সরে যেতে বলে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রুবেল রাসেল, সাইফুল এবং পারভেজ হোসেন শ্যামনগণ হাবিব মৃধাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তাহারা পুর্ব পরিকল্পনা মতে গত ০৪/০৮/২০২১খ্রিঃ রাত অুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম রুবেল মৃধাকে ফোন করে গুপ্তের বিলের পাশ্ববর্তী কাচা রাস্তায় দেখা করতে বলে। তাহারা পুর্ব থেকে রাসেল এবং রাসেলের সহযোগী সাইফূল ইসলাম এবং পারভেজ হোসেন শ্যামনগণ রাতের অন্ধাকারে উৎ পেতে থাকে। রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম হাবিব মৃধা উক্ত ঘটনাস্থলে পৌছিলে রুবেল মৃধার সাথে কথা বলার একপর্যায়ে পিছন দিক হইতে সাইফুল ইসলাম কালো নাইলন এর রশি দিয়ে হাবিব মৃধার গলায় পেঁচিয়ে ধরে। শ্যামন ও রাসেল দুই হাত এবং রুবেল দুই পা চেপে ধরে ভিকটিম হাবিব মৃধাকে মাটিতে শোয়াইয়া শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। নিহত হাবিব মৃধার লাশটি গোপন করার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী গুপ্তের বিলে ফেলে দেয়।
আসামী রুবেল ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রশি শিউলীর বাড়ীর সামনে সরকারি খালে ফেলে দেয় এবং সেখানে শিউলীর সাথে দেখা করে হাবিব মৃধাকে হত্যার ঘটনা জানায়। ঘটনার পর পরই রুবেল আত্নগোপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় পালিয়ে যায়।
গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে রুবেল এর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ফরিদগঞ্জ থানার চৌকস অভিযান টিম ঢাকার উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করিয়া রুবেল(৩১), পিতা-আবুল বাশার, মাতা- আমেনা বেগম, গ্রাম- সাহেবগঞ্জ(মিজি বাড়ী, থনা-ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুরকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে রুবেল এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ সাইফুল ইসলাম(৩৩), পিতা-মৃত হোসেন বেপারী, মাতা-মৃত কহিনূর আক্তার, গ্রাম-সাহেবগঞ্জ( আবদুল হামিদ বেপারী বাড়ী), থানা- ফরিদগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর আসামী সিফাত উল্যাহ প্রকাশ রাসেল(২৭), পিতা-হেজবুল্লাহ, মাতা-ফাতেমা বেগম, গ্রাম-সাহেবগঞ্জ (আহসান উল্যাহ মাষ্টার বাড়ী), থানা- ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, আসামী পারভেজ হোসেন প্রকাশ শ্যামল (২৬), পিতা-মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মাতা-ফাতেমা বেগম, গ্রাম-সাহেবগঞ্জ(দাই বাড়ী), থানা-ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর’গণদের গ্রেফতার করা হয়।
এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রুবেল এর দেওয়া তথ্যমতে ১১/০৮/২০২১ খ্রিঃ রাত অনুমান ০১.০০ ঘটিকার সময় শিউলীর বাড়ীর সামনে সরকারি খাল হইতে ডুবুরীর মাধ্যমে তল্লাশী করিয়া ভিকটিম হাবিব মৃধার ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড স্যামসাং মোবাইল উদ্ধার পূর্বক জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করা হয়। উপরোক্ত আসামীগণ’দেরকে যথাযথ পুলিশ স্কটের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হইয়াছে।