শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

অলৌকিক ট্রেন

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪৩ পাঠক
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

অনুগল্প
======
অলৌকিক ট্রেন
শাহজাহান চঞ্চল

রহস্য আবরণ জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেনটি। ইন্জিন রুমে কোন চালক দৃশ্যমান নয়। ট্রেনের প্রথম কামরার জানালা গড়িয়ে ঠিকরে পড়ছে অপূর্ব আলো।বাতাসে পা রাখছে ভিন্ন মাত্রার সুগন্ধ। দ্বিতীয় কামরার দরজা, জানালা খোলা। বাতাসের ছোটাছোটি তাতে। কাঁপছে আকাশ নীল পর্দা, বাতাসের আঘাতে আঘাতে। পরের কামরাগুলি আবছা হতে হতে অদৃশ্যে পরিণত হয়েছে।
ট্রেনটি যে স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে তার কোন নাম নেই। কাছে কোন লোকালয় নেই। অরণ্য নেই। নদী কিংবা সমুদ্রও নেই। চারিদিকে বিস্তৃর্ণ ফাঁকা। সেই ফাঁকার মধ্যে হঠাৎ ঢেউ খেলে গড়িয়ে যায় সাতটি রং।বেগুণি, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। সেই রংয়ের ঢেউয়ে খেলা করে আটটি বয়েসী তিমি। ট্রেনটি হুইসেল বাজায়। সাত পাঁচ না ভেবেই আমি ট্রেনটির দ্বিতীয় কামরায় ওঠে বসি। চলতে শুরু করে ট্রেন। জানিনা গন্তব্য কোথায়। গতি বাড়ছে ট্রেনের। উল্কাবেগে চলছে ট্রেন।

ট্রেনের গতি এখন কমছে আবার। এক সময় দাঁড়িয়ে যায় সটান। আমি জানালা দিয়ে চোখ ছুঁড়ে দেখার চেষ্টা করি। কোন স্টেশন বলে মনে হয় না জায়গাটিকে। ফাঁকা প্রান্তর,হালকা বেগুণি রংয়ের। দূর থেকে দূরে একই রং। কোথায় শুরু কোথায় শেষ কে জানে? হঠাৎ দেখি আকাশ থেকে ভেঙে ভেঙে পড়ছে চাঁদ।বাতাস শুরু হয় জোরে। বাতাসের পেছনে ধেয়ে আসে আরেক বাতাস।বাতাসের পেছনে হেঁটে আসতে দেখি ভ্যানগগ’কে। তাঁর হাতে রংতুলি। মুছে যেতে শুরু করে হালকা বেগুণি রং। চারিদিকে জন্ম নেয় হলুদ। অদূরে দেখি হেঁটে আসছে জয়নুল আবেদীন। তাঁর কাঁধে দুর্ভিক্ষের সেই চিত্র। ভ্যানগগের হলুদ রং আর জয়নুলের চিত্র দেখে আমি সংকিত হই। ক্যাটারিনা, সিডর, নার্গিস নামের ৎসুনামী আমার চোখে ভাসে। ট্রেন থেকে নামার ইচ্ছা জাগে, ভ্যানগগ, জয়নুলকে জিজ্ঞেস করা দরকার পৃথিবী কি আরো বড় কোন শাস্তি পাওয়ার অপেক্ষায়? কিন্তু ট্রেনটি চলতে শুরু করে। প্রথম কামরাটি থেকে আমার নাকে এসে বসে এক ঝাঁক সুগন্ধ। আমি জানালা দিয়ে গলা বাড়াই। ভ্যানগগ, জয়নুল দুজনেই হাসে। মনে হয় তাঁরা পড়ে নিয়েছে আমার ভাবনার শ্লেটটি। আমি স্পষ্ট শুনতে পাই দু’জনেই সমস্বরে আওড়াচ্ছে — ” কল্যাণের চিন্তা কর, মঙ্গলের চিন্তা কল। চিন্তাই সব। চিন্তায় তুমি পৃথিবী গড়তে পার, ভাঙ্গতেও পার। চিন্তা দিয়েই তুমি করতে পার মানবের কল্যাণ, চিন্তা দিয়ে আবার তাঁদের ধ্বংসও ডেকে আনতে পার।চিন্তার সংস্কার কর। কল্যাণের চিন্তায় মগ্ন হও। তবেই তোমাদের পৃথিবী নিরাপদ।”
ট্রেনটি চলা শুরু করে,গতি বাড়ে। ভ্যানগগ, জয়নুল আমার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ে। আমি তখন সন্মুখ পানে।

আর তখন শূন্য থেকে কোলাহল করে বৃষ্টির মসলিন পরে মেঘেরা নেমে আসে। শীতল ছোঁয়ায় প্রশান্ত হয়ে উঠে চারিদিক। ঝাঁকবাঁধা সূগন্ধটা আমাকে জাগিয়ে তোলে। প্রজাপতির পাখার মতো আমি চোখের পাতা খোলতে শুরু করি। টেবিল ল্যাম্পের মিশ্র আলো আমার চোখের কর্ণিয়াতে বসে পড়ে। জানালার বাইরে বৃষ্টি ঝরার শব্দ। আমার মাথার কাছে বসা এক নারী। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাঁর শরীর থেকেই ভেসে আসছে সুগন্ধ। সে কে? জননী, জায়া? পার্থিব কি অপার্থিব সে চিন্তায় না গিয়ে আমি পুনরায় চোখ বন্ধ করি। কানে বাজে সেই শ্লোক–” কল্যাণ কর, মঙ্গল কর।”
আমার মাথার চুলে তখন বিলি কাটছে সেই নারীর পাঁচটি আঙ্গুল।

(গল্পটি পাঁচ বছর আগে লিখা)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *