সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

আসতে শুরু করেছে নতুন বই

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৯ পাঠক
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক, বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগ-অনুভূতি-চেতনা। তাই তো নতুন বইয়ের গন্ধের টানে বিভিন্ন বয়সীরা প্রতিদিন ভিড় জমান একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে। গ্রন্থমেলায় বইপ্রেমীদের প্রত্যাশা পূরণে প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসছে। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন ও পুরনো লেখকদের বই। দিন যতই যাচ্ছে নতুন বইয়ের সংখ্যাও ততই বাড়ছে। নবীন-প্রবীণ লেখকরাও আসছেন গ্রন্থমেলায়। গ্রন্থমেলার পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ স্টল সাজসজ্জা শেষ করেছে। স্টলে স্টলে শোভা পাচ্ছে থরে থরে বইয়ের স্তূপ। স্টলের সামনেও সারি সারি মেলে ধরা হয়েছে বই। গতকাল শনিবার বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ মেলার তৃতীয় দিনে এসেছে বিভিন্ন লেখকের গল্প, কবিতা, উপন্যাস আর প্রবন্ধের নানা বই।

বইপ্রেমীদের অপেক্ষার প্রহর যেন আর কাটছিল না। সকাল ১১টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল মেলার সব প্রবেশপথ। কখন খুলবে, কখন পছন্দের লেখকের বই কেনা যাবে এমন চিন্তা নিয়ে মেলার বাইরে অপেক্ষা করেছেন কয়েকশ’ বইপ্রেমী। সঙ্গে ছিল বাবা মায়ের সঙ্গে আসা বিভিন্ন বয়সী ছোট্ট সোনামনিরা। বাইরের দীর্ঘ লাইন দেখে মনে হয়েছে বইপ্রেমীরা যেন পুরো একটি বছর অপেক্ষায় ছিলেন এ দিনটির জন্য। মেলার দ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মুখরিত কোলাহল ছড়িয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে ওপারের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। সব মিলিয়ে মেলার শুরুতেই পাঠক-কবিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই।

বিকেল যতই গড়াচ্ছিল, ততই ভিড় বাড়ছিল মেলায়। বইপ্রেমী জনস্রোতকে সঙ্গী করে গতকাল শনিবার পার হয়েছে মেলার তৃতীয় দিন। মেলায় প্রতিটি স্টলেই এসেছে নতুন নতুন বই। দর্শনার্থীরাও স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে নতুন বইয়ে হাত বুলিয়েছেন। এক সময় নতুন রং আর বইয়ের ভাঁজ খোলা গন্ধে মেতে ওঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় দর্শনার্থীদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। অনেকেই এসেছেন জুটিবদ্ধ হয়ে, আবার কেউ কেউ এসেছেন দল বেঁধে। খবর নিয়েছেন, কার কোন বই কবে মেলায় আসবে। সে অনুযায়ী সংগ্রহ করে নেয়ার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। তবে বেশি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘ্রাণ পেয়ে বইপোকারা ছুটে এসেছেন গ্রন্থমেলায়। টিএসসির সান্ধ্য আড্ডাগুলোও স্থানান্তরিত হয়েছিল গ্রন্থমেলায়। আড্ডার ফাঁকে অনেকেই আবার নতুন বইয়ের তালিকা সংগ্রহের কাজ করেছেন।

তৃতীয় দিনে বইয়ের বেচাকেনাও বেড়েছে বলে জানা যায়। তবে কী পরিমাণ বেচাকেনা সেটি বোঝা সহজ ছিল না। অবশ্য জনপ্রিয় লেখক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো লেখকদের বইয়ের চাহিদা একটু বেশি বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর প্রকাশক একেএম তারিকুল ইসলাম রণি বলেন, মেলায় গত দু’দিন বিক্রি ভালো হয়েছে। তবে মেলায় মূল বিক্রি শুরু হবে আরো কয়েকদিন পর। নতুন বই আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে এখন হচ্ছে বই আসার সময়। মেলার প্রথম দশদিনের মধ্যেই প্রায় সব নতুন বই চলে আসে মেলায়।

মেলার প্রথম দু’দিনেই নতুন বইয়ের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। যদিও বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র শুক্রবার মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা দিয়েছে ৫৪টি। এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমার ধারণা প্রকাশকরা যে তথ্য প্রতিদিন দেন তার থেকে অনেক বেশি বই বের হয়। কোনো প্রকাশক যদি সময়মতো দিনেরটা দিনে বইয়ের তথ্য দিতে না চান, তবে আমরা তো জোর করে শাস্তি দিতে পারি না। এ বিষয়ে তাদের সচেতন হতে হবে। এতে বাড়বে তথ্যপ্রবাহ। আর সাধারণ পাঠকরা তথ্য কেন্দ্র থেকে পূর্ণ সঠিক বিষয়গুলোই জানতে পারবেন। এ বিষয়ে তিনি প্রকাশকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যে বই যেদিন মেলায় আসছে, তারা যেন সেই তথ্য সে দিনই মেলার তথ্যকেন্দ্রে জমা দেন।

মেলার সময়সূচিতে শনিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশু প্রহরের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বেলা গড়ালেও শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ছিল ক্ষুদে বইপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়। তারা স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়িয়েছে পছন্দের বইটি কেনার জন্য। কেউ কেউ বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখেছে। যে বইটির প্রচ্ছদ, ভেতরের অলঙ্করণ ভালো লেগেছে সেটি কিনেছে।

অন্যদিকে শিশু প্রহর উপলক্ষে সিসিমপুরের মঞ্চে ছিল হালুম, ইকড়ি, টুকটুকির উপস্থিতি। তাদের উপস্থিতি শিশুদের বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। এ সময় শিশুরা তাদের সঙ্গে নেচে গেয়ে মেলা উপভোগ করেছে। শনিবার শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানদের খ্যাতিমান লেখকদের বই কিনে দিয়েছেন। আর কিশোর-কিশোরীদের সেবা প্রকাশনী, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশিত বই ও রোমাঞ্চোপন্যাস কিনতে দেখা যায়।

নতুন বই: বাংলা একাডেমি প্রদত্ত তথ্যানুসারে গতকাল নতুন বই এসেছে ১২০টি। এরমধ্যে অন্যধারা এনেছে অরুন্ধতী রায়ের ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’, ইন্তামিন প্রকাশন এনেছে শওকত আলীর ‘শুধু কাহিনী’, সময় এনেছে সুমন্ত আসলামের ‘প্রিয়ব্রত ব্যক্তিগত পাপ’, আনিসুল হকের ‘ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা’, সেলিনা হোসেনের ‘আপন আলোয় দেখা’, অনুপম এনেছে যতীন সরকারের ‘রচনাসমগ্র-৬’, কথা প্রকাশ এনেছে সনৎ কুমার সাহার ‘একটু আধটু পরাণ’, অনন্যা এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘ভূতে নিল ইলিশ মাছ’, আদর্শ এনেছে শিশির ভট্টাচার্যের ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হচ্ছিল’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘সময় অসময়’, আগামী এনেছে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের ‘১৯৭১ উত্তাল মার্চের দিনগুলো’, অনিন্দ্য এনেছে মোশতাক আহমেদের ‘অমর মানব’, উৎস এনেছে নাসির আহমেদের ‘প্রতীক্ষা তোমার জন্য’।

মূলমঞ্চের আয়োজন: শনিবার বিকেল ৪টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শফিউল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মো. মনিরুল ইসলাম ও সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী রফিকুল আলম।

প্রাবন্ধিক বলেন, উনিশ শতকের যে কয়েকজন খ্যাতিকীর্তি মুসলমানের জন্য হয়েছিল তাদের অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য খানবাহাদুর আহছানউল্লা। তিনি বাঙালি মুসলমানদের সামাজিক ইতিহাসে যেমন অনন্য পুরুষ, তেমনি স্ব-সম্প্রদায়ের ভেতরে সাধারণ শিক্ষার প্রসারকল্পে তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য। তিনি বলেন, খান বাহাদুর আহছানউল্লা’র সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনকে নানামাত্রিকভাবে দেখা যায় শিক্ষাবিদ, শিক্ষাসংস্কারক, পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা, সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা, সংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সৃজনশীল মানুষ- এরকম নানা অভিধায় তাকে চিহ্নিত করা যায়।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সুজিত মোস্তফা, এ কে এম শহীদ কবীর পলাশ। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন পিনু সেন দাস (তবলা), রবিনস্ চৌধুরী (কি-বোর্ড), এবং ফিরোজ খান (সেতার)।

আজকের আয়োজন: আজ ৪ ফেব্রুয়ারি রোববার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৪র্থ দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এ ছাড়া বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শহিদ রণদাপ্রসাদ সাহা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রমণীমোহন দেবনাথ, হেনা সুলতানা এবং আজিজুর রহমান আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *