রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

চীনে উইঘুর নির্যাতনের নথি ফাঁস

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪০ পাঠক
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীন জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এমন ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তবে দেশটিতে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকায় নির্যাতনের প্রকৃত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা বেশ কঠিন।

সম্প্রতি উইঘুরদের ওপর নির্যাতনের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা বিষয়ক চীন সরকারের বেশ কিছু গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির হাতে আসা এসব নথিতে দেখা গেছে, উইঘুরদের সামাজিক সম্প্রীতি ভেঙ্গে দেওয়াসহ তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতেই চীন সরকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে।

এমির, তিনি জিনজিয়াংয়ের কারাকাক্স অঞ্চলের এক ইমাম। কয়েক দশক ধরে এমির ছিলেন তার সম্প্রদায়ের মানুষের নির্ভরতার প্রতীক। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রচার করতেন। কেউ অসুস্থ হলে হেকিমের কাজ করতেন। নানা প্রকার ঔষধি গাছ থেকে ওষুধ তৈরি করতেন। শীতকালে ঠাণ্ডায় কাতর দরিদ্র মানুষের ঘরে কয়লার বোঝা নিয়েও হাজির হতেন তিনি।

তিন বছর আগে চীন সরকার যখন জিনজিয়াংয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করার উদ্যোগ নেয়, তখন সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ ছাড়াই বৃদ্ধ এমিরসহ তার তিন পুত্র সন্তানকে গ্রেফতার করা হয়। ইতোপূর্বে এসব কিছুকে কারণ ছাড়াই নির্যাতনমূলক গণগ্রেফতার কর্মসূচি মনে করা হতো। এবার চীন সরকারের গোপন নথিতে আসল কারণ পাওয়া গেছে।

বার্তা সংস্থা এপি ফাঁস হওয়া নথির বরাতে জানাচ্ছে, নির্দোষ হলেই পার পাওয়া যাবে না, উইঘুরদের ইসলামি সংস্কৃতি ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এমন ব্যক্তিদের চীন সরকার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে।

এজন্য অনেক ব্যক্তিকে শুধুমাত্র দাঁড়ি রাখা, মসজিদে যাওয়াসহ অনেক তুচ্ছ কারণে গ্রেফতার করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পরিকল্পিতভাবে এমিরের মতো অনেক উইঘুর পরিবার ও তাদের সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চায় চীন।

এদিকে ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, এসব নথিতে আলোচিত অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ৩১১ জন ব্যক্তির পরিচিতি এবং তাদের পরিবার পরিজনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আছে। আছে প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার এবং তাদের আটকে রাখা হবে নাকি মুক্তি দেওয়া যাবে, এমন সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নির্দেশনা।

এই নথি হাতে আসার পর বার্তা সংস্থা এপি মন্তব্যের জন্য জিনজিয়াংয়ের প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। কিন্তু তারা এতে কোনও প্রকার সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এ ব্যাপারে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেরেন বাইলার বলেন, এটা সুস্পষ্ট চীন তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। চীন উইঘুরদের সমাজ, পরিবার ভেঙ্গে দিতে চায়। শেকড়ের বন্ধন না থাকার কারণে নবীনদের সহজেই নতুন মতাদর্শে প্রশিক্ষিত করা সম্ভব। সম্ভবত চীন সরকার এমন মনোভাবের কারণেই উইঘুরদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *