সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
বর্তমানকন্ঠ ডটকম : করোনা সংক্রমণের মাঝে যুদ্ধের জিগির তুলল চিন। চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং চিনা সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কয়েকদিন ধরে লাদাখে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। লাদাখের লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। তারপর চিনের রাষ্ট্রপতির পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কে তৈরি থাকার নির্দেশ, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধেরই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপোর্ট বলছে, ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার চিনা সেনা লাদাখের লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল ক্রস করেছে বা লাইনের খুব কাছে রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছে, তা ২০১৭ সালের ডোকালামের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে।
বেশ কিছু দিন ধরে লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এর আগে সিকিমে আইটিবিপি-র জওয়ান ও চিনা সেনার মধ্যে ধস্তধস্তি হয়েছিল। যদিও পরে তা মিটে যায়। কিন্তু লাদাখে ভারতীয় ও চিনা সেনা কার্যত মুখোমুখি অবস্থান করছে। গত ৫ মে প্যাংগং লেকের উত্তর দিকে ভারতীয় ও চিনা সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। স্থানীয়ভাবে ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করা হলেও, বরফ গলেনি।
এদিকে, লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি মঙ্গলবার দু’দফায় বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে। বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শংকরও উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী আলাদা করে বৈঠক করেন বিদেশ সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রণকৌশল ঠিক করতেই প্রধানমন্ত্রী জরুরি বৈঠক ডাকেন।
পাশাপাশি লাদাখ নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত ও তিনবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে তিনিও বৈঠক করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের পর এটা পরিষ্কার যে, ভারতও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে পদক্ষেপ করা হবে বলে বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর। সীমান্তে মোতায়েন করা হচ্ছে বাড়তি সেনা।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসা বেশকিছু উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, লাদাখের প্যাংগং লেক থেকে মাত্র ২০০ কিমি দূরে এয়ার বেস তৈরি করেছে চিন। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, তিব্বতের নাগরী গুনসা এয়ারপোর্টে নির্মাণকাজ চলছে। ৬ এপ্রিল ও ২১ মে’র দুটি ছবি সহ আরও কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। উপগ্রহ চিত্র থেকে পরিষ্কার, নাগরী গুনসা বিমানঘাঁটিকে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান অবতরণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে।
আরেকটি ছবি থেকে অনুমান করা হচ্ছে, ওই বিমানঘাঁটিতে চিনের জে-১১ ও জে-১৬ যুদ্ধ বিমান নামতে পারবে। ওই যুদ্ধবিমানগুলি ভারতের সুখোই-৩০ এমকেআই-এর সমতুল্য। নাগরী গুনসা এয়ারপোর্ট মাটি থেকে ১৪ হাজার ২২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। মিলিটারি ও সিভিল-দুভাবেই যাতে ব্যবহার করা সেই হিসেবেই নাগরী গুনসা এয়ারপোর্টকে তৈরি করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই চিনা আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতের। করোনা পরিস্থিতির মাঝে ভারত কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে। দেশের অর্থনীতিও বেহাল, সংক্রমণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত কিভাবে চিনের মোকাবিলা করে, সেটাই দেখার।