বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিকতা না করলে অভিনেতা হতে পারতাম না: মাহফুজ

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৯৮ পাঠক
বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন

অভিনয় জগতের গুণী শিল্পী মাহফুজ আহমেদ। সাংবাদিকতা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে অভিনয়ে থিতু হন তিনি। অভিনয়ে নিজেকে উজ্জ্বল তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর নির্মাতা হিসেবেও সমানভাবে সাফল্য অর্জন করেন। এক সময়ের ব্যস্ত এই অভিনেতা হঠাৎ করেই অভিনয়ে বিরতি টানেন।

সেই দীর্ঘ আট বছরের বিরতি কাটিয়ে ‘প্রহেলিকা’ নামের সিনেমা দিয়ে কাজে ফিরেন। এবারের ঈদে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত সিনেমাটিতে মাহফুজের সহশিল্পী চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। এখনো বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি।

এদিকে, আজ (১৯ জুলাই) জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় লেখককে স্মরণ করলেন পরিবারের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। আজকের অভিনেতা মাহফুজ আহমেদকে তৈরি করেছিলেন এই নন্দিত লেখকই। তা অকপটে জানিয়েছেন মাহফুজ নিজেই।

সে কথা জানিয়ে অভিনেতা বলেন, ইমদাদুল হক মিলনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তার থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, এই তুমি অভিনয় করবে? এই শব্দটি আমাকে অনুপ্রেরিত করেছিল। তার প্রস্তাব পাওয়ার পর ঘুমাতে পারিনি। তখন একটি মাত্র চ্যানেল। টেলিভিশনে মুখ দেখানো ছিল বিশাল ব্যাপার। তিনি আমাকে অভিনয়ের উত্তেজনা ঢুকিয়ে দেন। তখন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে অভিনয় করি। পরবর্তীতে আমাকে হুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেন। এরপরের গল্প সবারই জানা।

সাংবাদিক থেকে অভিনেতা বনে গেছেন মাহফুজ আহমেদ। সেই জার্নির গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন বাবা যে, টাকা পাঠাতেন তা দিয়ে আসলে রাজধানীতে চলা যেত না। টানাপোড়েন করে চলতে হত। তখন দেখলাম আমার বন্ধুরা বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করে অর্থ উপার্জন করছে। তখন আমিও আগ্রহী হই। বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে ঘুরেও কাজ পাইনি।

একদিন এক পত্রিকার সম্পাদক একটি অনুবাদ করতে দিলেন আমি পারি কিনা যাচাই করার জন্য। আরেকজন বললেন, দেখি তো আপনি চিত্রনায়িকা চম্পার সাক্ষাৎকার এনে দিতে পারেন কিনা। সেসময় এ রকম পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। পরে জানতে পারলাম তিনি আসলে কাউকে দিয়ে চম্পা আপার সাক্ষাৎকার নিতে পারছিলেন না বলেই আমাকে বলেছেন। নানাভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে লেখার সুযোগ পাই। সেসময় লেখার জন্য ১৫০ টাকা পেতাম। টাকার জন্য লেখালেখি করেছিলাম। লিখতে লিখতে একদিন স্টাফ রিপোর্টার হয়ে যাই। এভাবেই শুরু -যোগ করলেন মাহফুজ।

তিনি আরও বলেন, খেলাধুলা, বিনোদন, রাজনৈতিক বিট করি। সেসময় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছিল। বিচিত্র মানুষের সঙ্গে মিশে আমাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছে। এটা আমার কাজে লেগেছে অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ হতে।

মাহফুজ বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাকে আজকের মাহফুজ আহমেদ তৈরি করেছে রিপোর্টার মাহফুজ। সাংবাদিকতা না করলে অভিনেতা হতে পারতাম না। অভিনয়ের চর্চা না করেই অভিনয়ে আসা। যখন দেখলাম আমার অভিনয় হচ্ছে না থিয়েটার করা দরকার তখন শেখার জন্য থিয়েটারে যুক্ত হই।

মাহফুজ আহমেদ অভিনীত নাটকের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘একান্নবর্তী’, ‘দেবদাস চোখের বালি’, ‘নুরুল হুদা নুরু’, ‘চৈতা পাগল’, ‘আমার বউ দারগা’, ‘নীল গ্রহ’, ‘ভালোবাসি তোমাকেই’, ‘কূহক’, ‘দুজনে’, ‘মিস্টার মিস্কল’, ‘বাহাদুর ডাক্তার’, ‘বিবর্ণ গোধূলি’, ‘সবাই তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক’, ‘রুপা’, ‘হারানো আকাশ’, ‘অতঃপর নুরুল হুদা’ ইত্যাদি।

সিনেমার পর্দায়ও উজ্জ্বল মাহফুজ আহমেদ। তার নিপুণ অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন বড় পর্দার দর্শকেরা। মাহফুজ আহমেদ অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে ‘দুই দুয়ারী’, ‘চার সতিনের ঘর’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘জয়যাত্রা’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘লাল সবুজ’, ‘কপাল’ ও ‘জিরো ডিগ্রি’।

মাহফুজ আহমেদ দেশের অন্যতম সেরা ও গুণী অভিনেতা। তার দক্ষ অভিনয় বরাবরই প্রশংসিত। এছাড়া তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। ‘লাল সবুজ’ ও ‘জিরো ডিগ্রি’ সিনেমা দুটির জন্য তিনি দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *