বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট:
হারবাল ও কবিরাজি দাওয়াখানা পুরোটাই প্রতারণা!
বরিশাল শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদে ইউনানী-আয়ুর্বেদ, ভেষজ, হারবাল ও কবিরাজি চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল। অসহায় মানুষের কাছ থেকে অপচিকিৎসার নামে তারা হাতিয়ে নেয় প্রচুর অর্থ। এসব বিষয় দেখার যেন কেউ নেই। নীরব বরিশালের প্রশাসন।
সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলের হাট-বাজারে রয়েছে ভুয়া চিকিৎসার দোকান। কথিত হারবাল সেন্টার গুলোতে চিকিৎসা নিয়ে রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দূরের কথা, উল্টো অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ ধরনের হারবাল চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে কতিপয় ব্যক্তি ও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান। বরিশাল শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রচারপত্রে এসব চিকিৎসক যৌন দুর্বলতার চিকিৎসার নামে পুরুষ ও মহিলাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা প্রথমেই হরেক রকমের বাহারি চকচকে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে লোভে ফেলার অপচেষ্টা চালায়। বরিশাল নগরের রুপাতলী বাসষ্ট্যান্ড, নতুল্লাবাদ বাসষ্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, পালাশপুর বস্তি এলাকা, কাশিপুর বাজার, কালিজিরা বাজারসহ নগরে অলি-গলিতে ছোট-বড় শতাধিক হারবাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ কবিরাজরা গ্যারান্টি সহকারে ঝাঁড় ফুক, হাত চালান স্বামী-স্ত্রী অমিল, প্রেমে ব্যার্থতা, জিনের আছর, যে কোন লোককে বশ করা, জন্ডিস, জীনের আচর, যৌনরোগ ও ক্যান্সারসহ জটিল ও কঠিন রোগের ওষুধ তারা দিয়ে থাকে। গাছ-গাছরায় তৈরি ওষুধ প্যাকেট করে পসরা সাজিয়ে মাইক দিয়ে ডেকে ডেকে বিক্রি করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের দপ্তরখানা ও পোর্ট রোর্ডের রাস্তার পাশে দুই কবিরাজ আসর জমিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন। লাইসেন্স বা সরকারের কোন অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন আমাদের কোন লাইন্সেন লাগেনা। আমরা শুধু শহরেই বিক্রি করি না। গ্রাম অঞ্চলেরও হাট-বাজারে গিয়েও বিক্রি করি। আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে লাইন্সেস ও সরকারি অনুমতি আছে কিনা জিজ্ঞেস করেনি। আপনি এই প্রথম জিজ্ঞেস করলেন ভাই। আজ ২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। অল্প পুঁজির ব্যবসা। বিভিন্ন হাট-বাজারে প্যাকেটজাত ওষুধ, কিম্বা বোতলজাত ওষুধ বিক্রি করে থাকেন যা নিজের তৈরি। নেই কোন উৎপাদন ও মেয়াদের তারিখ। তবুও শতভাগ গ্যারান্টি দিয়েই বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। এরকম অসংখ্য কবিরাজ হকারী করে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে করছে প্রতারণা।
এদিকে কথিত হারবাল সেন্টারগুলো ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে দোকান খুলে বসে আছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চিকিৎসালয়ের সংখ্যা কত এবং ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া এ ধরনের কতগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই ওষুধ প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে। এরপরও সব রোগের চিকিৎসার গ্যারান্টি সহকারে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে, কুরুচিপূর্ণ প্রচারপত্র বিলি করে ও বরিশালের ক্যাবল টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রামীণ জনপদের একশ্রেণীর হতাশাগ্রস্থ ও দিশেহেরা সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
নগরের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা কবির বলেন, ‘আমি প্রসাবের সমস্যার কারণে হারবাল চিকিৎসকের কাছ থেকে মোট ৫ হাজার টাকার ওষুধ খেয়েছি কাজ হয়নি। এসব ওষুধ খেয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি আরো। পরে ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’
অন্যদিকে বরিশাল সদর উপজেলার দিন খেটে খাওয়া সানচু বলেন, যেসমস্থ জটিল রোগের চিকিৎসা করছে তার কোনো সরকারি স্বীকৃতি পত্র নেই। আর এসব জটিল রোগের চিকিৎসা করছে সাধারণ জ্ঞানের ওপর ভর করে। এরা রোগের বর্ণনা শুনে হাত চালিয়ে কিংবা কৌশলে বিভিন্ন ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা। যারা আমার মত এই প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে সর্ব শান্ত হয়ে পড়েছেন তারা প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু পদক্ষেপ কামনা করছে।
একাধিক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে, এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে যৌন ব্যধি ও জটিল রোগ নিরাময়ের নামে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তা ভুক্তভোগীদের কোন উপকারে আসছে না। বরং তারা নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হারবাল ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে চিটা গুড়ের সাথে কলা গাছের শিকড়ের রস মিশিয়ে তৈরি করে ‘যৌবন বাহার’ সালসা। ময়দা, চিটা গুড়, আনারসের পাতার রস ও সেকারিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় যৌন বর্ধক ‘যৌবন বাহার’ হালুয়া। আর বিজ্ঞাপনে বলা হয় এই ওষুধ ব্যবহার করলে ৮০ বছরে বয়স্ক লোক তরতাজা যুবকে পরিণত হবে। বিফলে মূল্য ফেরত। কিন্তু টাকা চাইলে হারবাল চিকিৎসরা তখন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নানাভাবে হেনস্তা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি স্বঘোষিত ‘স্বনামধন্য’ হারবাল চিকিৎসা কেন্দ্রে তাদের মতামত জানতে চাইলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাফা কামাল বলেন, হারবাল ও ভেষজ চিকিৎসার কোনো বৈধতা নেই। অনেক রোগীর জীবন শেষ করে দেওয়া হয়। হারবালের ওষুধ সেবন করে ক্ষতির শিকার অনেক রোগীর চিকিৎসা আমি করেছি। এখন মাঝে মাঝে এসব রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিভিল সার্জন বলেন, বিষয়টি আমাদের নয়। এগুলো দেখার দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।