শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন

উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ

শ্রী অরবিন্দ ধর / ৯৬ পাঠক
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন

মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর বাংগালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে অতীব গুরুত্ববহ দিন। কিন্তু সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ তম বার্ষিকী ছিল আমাদের অহংকারের শ্রেষ্ঠতম বিজয় দিবসটি রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে প্রজন্মের কাছে অজানা সম্ভাবনায় নিমজ্জিত এবং স্বাধীনতা দিবস অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তা স্বাধীনতা অর্জনকারীদের একান্ত ভাবনার বিষয় ছিল। শুধু আমাদের জেলায় নয় সারাদেশে ২০০১-২০০৫ বিজয় দিনগুলি ছিল আনন্দ উল্লাস বর্জিত। স্বকীয়তা বিহীন, একেবারে ম্রিয়মান এবং বিগত দিনের যে কোন বিজয় দিবসের চেয়ে ছিল বিস্তর তফাৎ। অনিবার্য বিপর্যয়মুখী ভাবনায় অনিশ্চয়তার মাঝে সম্মুখে পথচলা, ভাবনা ছিল নতুন প্রজন্মের কাছে বিজয় দিনটি কোন অজানা সম্ভাবনা বয়ে আনবে? এ আত্মদহনে সমাপ্ত হয়েছিল আমাদের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর ২০০১-২০০৫।

আশংকা ছিল আগামী প্রজন্মের চেতনা কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ ঐতিহ্যবাহী স্বাধীনতা? এ বীরত্ব গাঁথা বাংগালীর ইতিহাস ৪১ বছর পর ফিরে এসেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করার দুরভাবনা নিয়ে কিন্তু জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুকৌশলে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ৪৩ বছর মধ্যে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মননকারী কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর সহ স্বাধীনতা অর্জনকারী সর্বজন আত্মতৃপ্তি লাভ করছে। অপ্রতিরোদ্ধ অগ্রযাত্রায় উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ, এ বছর ৪৯তম বিজয় মাসে শপথ হউক স্বাধীনতা বিরুধী চক্রের অশুভ শাক্তির পায়তারাকে স্তব্দ করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। স্বাধীনতার বাস্তব ইতিহাস আংশিক তুলে ধরছি, বর্তমান তরুণ যুব পাঠক চেতনায়, ৭১ এর এই দিনটিতে যারা ছিল শিশু। জাতির এ মহান বিজয় দিবসটির স্মরণে মনে পড়ছে বাঙ্গালীর যুগশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর কথা। তিনি ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত। যার জন্ম বার্ষিকী ভারতে সংগ্রামী চেতনায় পালিত হয় কিন্তু মৃত্যু বার্ষিকী আজও পালিত হয় না। যেহেতু মৃত্যুর ঘটনা রহস্যাবৃত। তারপর স্মৃতিচারণে ভেসে উঠেছে বিশ্বে পরিচিত বাঙ্গালী নেতৃত্ব ক্ষণজন্মা পুরুষ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগী দেশ প্রেমের লোমহর্ষক ঘটনা প্রবাহ।

মনে পড়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের আকাশ-বাতাস কাঁপানো সর্বস্তরের বাংগালীর প্রতি আহ্বান-“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকন্ঠে ঘোষনা দিয়েছিলেন, “আমার বাঙ্গালী ভায়েরা ঘরে-ঘরে দূর্গ গড়ে তোল।” কৃষক-মজুর, জেলে-তাঁতী সহ আমার গ্রাম-গঞ্জের সকল জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যা আছে তা নিয়ে প্রস্তুত হও। স্বাধীনতার লক্ষ্যে এ প্রাণবন্ত আহ্বানে, সকল মানুষ ভেদাভেদ ভুলে খুন্তি, কুড়াল, লাঠি, বল্লম, দা, রামদা, পাঠাবলির খর্গ নিয়ে বীর দর্পে প্রতিটি জেলা, থানা শহরকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করেছিল কর্মসূচীর প্রতিটি দিনে। সিংহ গর্জনে সর্বশেষ ঘোষণা দিলেন,-“এবার দীর্ঘ ২৪ বছর পর পাকিস্তানী দুঃশাসনের শোষণের শৃঙ্খল ভেঙ্গে তোমাদের স্বাধীনতা দেব, বাঙ্গালী জাতিকে পরাধীনতার খাঁচা থেকে মুক্ত করব ইনশাল্লাহ।” শেখ মুজিবের এই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের আহ্বানে পাকিস্তান সরকারের টনক নড়ে এবং করাচীতে গোল টেবিল বৈঠক বসে, নীলনকশা এঁকে ইহাহিয়া খানের নির্দেশে বাঙ্গালী জাতিকে ধ্বংস করার জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

এদিকে কায়দে আযম অনুসারীরা, মীরজাফরের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করে। তারপর ২৫ শে মার্চ কাল রাত্রিতে পাকসৈন্যরা ঘুমন্ত নিরস্র বাঙ্গালীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। পাক হানাদার বাহিনী সারা দেশে সশস্র আক্রমন শুরু করে, ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙ্গালী নিধন যজ্ঞে। এ নিধন যজ্ঞ সময়কালে আমি বৃহত্তর ময়মনসিংহে ছাত্র রাজনীতিতে ময়মনসিংহ শহর কমিটির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রত থেকে এ অতর্কিত আক্রমণের মোকাবিলা করতে গিয়ে সহকর্মীদের নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় ঢুকে শহরবাসীকে অভয় দিয়ে গুলির আওয়াজ লক্ষ্য করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পরি। যখন জানতে পাই ময়মনসিংহ বর্তমান বিডিআর ক্যাম্পে বাঙ্গালি ইপিআর ভাইদের প্রতি অতর্কিত আক্রমণ চালাচ্ছে, আমার পেছনে ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ কর্মী, আমি নির্ভয়ে এগিয়ে ঢুকে পরি ক্যাম্পে। ঢুকেই ইপিআরদের সাথে প্রতিরোধে সহযোগীতা করি। তারা আমাকে ছাত্রনেতা হিসাবে চিনে ফেলায় কোন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় নি। আমার সাথীরা সকলেই ভয়ে বাসায় ফিরে যায়। চলে সারারাত উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময়। আমি সারারাত তাদের সাথে থেকে ক্যাম্পের পাকিস্তানি ইপিআরদের নিধন করে বিজয়ের আনন্দে ভ্যান গাড়ি নিয়ে মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টির গামলা ধরে বেকারিতে গিয়ে পাউরুটি বস্তায় ভরে সকালের খাবারের ব্যবস্থা করি।

তারপর নরপশুদের লাশ ট্রাকে করে ব্রহ্মপুত্র নদের ব্রিজের নিচে ফেলে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময়ক্ষণে শহরের লোকজনদের ভীড়ে আমার কর্মী দুই-তিন জনের সাথে দেখা হয়। তারা বলে “অরবিন্দ দা, আমরা ভীত হয়ে ফিরে যাই, আপনার এ সাহসের বলিহারী। তবে সারা শহরে আপনার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পরেছে। সারারাত-সারাদিন মধ্যে আপনার খোঁজ কেউ আপনার কাকাকে দিতে পারেনি। আমরা আপনাকে নিয়ে যেতে পারব না, কাকার সাথে মিথ্যা কথা বলেছি। কাকা রাতে ও সারাদিন সকলের বাসায় আপনাকে খোঁজে না পাওয়ায় আপনার পরিবার পরিজন ও পাড়ার সকলেই কান্নাকাটি শুরু করে, অরবিন্দ নেই। তাই ইপিআর ভাইদের সঙ্গে নিয়ে যান, যদি আপনার কাকার মার থেকে বাঁচতে চান। এদিনই ময়মনসিংহের আকাশে স্বাধীনতার লাল সূর্য আংশিক উদিত হয়েছিল। আমার মনে স্বাধীনতা অর্জনের একবিন্দু পরিমাণও আশংকা ছিল না। ছোট ভাই-বোন, বৃদ্ধ পিতা-মাতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু শরণার্থী হয়ে রংরা বাঘমারা ক্যাম্পে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করতে গিয়েও জীবন বিপন্নের সম্মুখীন হয়েছি। শরণার্থী শিবিরের পরিচালকদের সাথে সংগ্রাম করে শরণার্থীদের খাবার ও চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থা নিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি। কি দূর্বিসহ অসহায় জীবনের যন্ত্রনা অনুভব করেছি। মনে হলে, গা শিহরিয়া উঠে। তারপর আসছি সার্বিকভাবে অসহায় অবস্থায় সৃষ্ট, এ বাঙ্গালী নিধন যজ্ঞের মোকাবিলা করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসহ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে উঠে বিপল্লবী চেতনায় মুক্তি সংগ্রামের আন্দোলনে। গোটা বাঙ্গালী জাতির নব্বই ভাগ মানুষ অংশ নেয় এ গণ-আন্দোলনে। আবেগ প্রবণ বাঙ্গালী জেগে উঠে সিংহ গর্জনে জাতির মুক্তির লক্ষ্যে। জাতীয় চেতনাকে সামনে রেখে আমাদের ই.পি.আর পুলিশ জোয়ান সহ নেতা-কর্মী ছাত্র-যুবক সংগঠক ও দামাল ছেলেরা মিলে সকল জনতা ঐক্যজোট বেঁধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সীমান্তে আশ্রয় নিয়ে মুজিব নগরে গঠিত মুজিব সরকারের নির্দেশে গঠন করে, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী। শুরু হয় মরণপন যুদ্ধ পাকহানাদারদের সাথে।

ভারত, পাকহানাদারদের অতর্কিত প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের মুজিব নগরে গঠিত মুজিব সরকারকে সমর্থন জানিয়ে, ন্যায় যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। ভারতের সক্রিয়, সার্বিক সহায়তায় ও সহযোগীতায় নয় মাস পর যুদ্ধে পাকহানাদারদের দল পরাজয় বরণ করে তারপর পাকসৈন্যদের আত্মসমর্পন করার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটে। দীর্ঘ ২৪ বছর পর পশ্চিমা সৈরতন্ত্রের শাসন-শোষণের অবসান হয়, ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর এই মহান দিনটিতে। পূর্ব পাকিস্তান শত্রুমুক্ত হয় ভাষা আন্দোলনের রোপিত বীজ অংকুরোধগমে, পূর্ব পাকিস্তান নামক প্রদেশটির সমাধিতে নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা পায়। এদিকে ১৯৪৭ সালে অখন্ড ভারতকে দ্বিখন্ডিত করেছিল কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্না দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম জাগরনের চেতনায় ইসলামের জোয়ারে। আর বাংলা ১৩৫৮ সনে ইংরেজী ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল উর্দ্দু ভাষার বিপক্ষে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার তীব্র চেতনায়। বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধে প্রাণ দিয়েছিল শহীদ রফিক, বরকত, ছালাম, জব্বার সহ হাজার-হাজার ছাত্র-জনতা। ভাষা কেন্দ্রিক বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদের আন্দোলনই বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের। এদিকে নবাব সিরাজ-উ-দৌল্লার আমলে মীরজাফরের উত্তরসুরীরা, দেশের কিছু সংখ্যক বাংগালী স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে মুসলিম সাম্প্রদায়িক চেতনায় হাত মিলায় হায়নাদের সাথে। তারা গঠন করে আলবদর, রাজাকার, বাহিনী ও শান্তি কমিটি। জাতীয় ভাই হয়ে, জাতীয় ভায়ের বুকে আঘাত হানে। লুট-পাট করে জাতীয় ভায়ের ধন-সম্পদ। পাক হানাদারদের পরাজয়ের সাথে সাথে বিজয় উল্লাসের সমারোহে। সহজ সরল উদার চিত্তের মানুষটি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহানুভবতার পরিচয়ে, জাতীয় ভাই হিসাবে তাদের ভুলের সাধারণ ক্ষমা প্রদান করেন। মীরজাফর সুরীদের রক্ষা করার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৭ সন থেকেই ওরা চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। দিনে-দিনে হচ্ছে এদের বংশ বিস্তার।

৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও মুসলিম চেতনার প্রকটতায় সাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিতে নির্বাচন সমাধা হয়েছিল, জনমনে ছিল না আওয়ামী বি.এন.পি রাজনীতির চেতনা। জাতীয়তাবাদের চেতনাও হারিয়েছে ইসলাম রক্ষার ভ্রান্ত ধারণায়। ইসলামকে রাজনৈতিক পুঁজি করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে দুর্বল করে ভোট কুঁড়িয়েছিল ঐক্যজোট সরকার। যাক আবার ফিরে যাচ্ছি ৭১ সনের সেই রক্তঝরা দিনগুলোতে একি ঐক্যের বাঁধন তৈরি হয়েছিল প্রতিদিন, সভা-সমাবেশ, মিছিল আর মিছিলে শ্লোগানে-শ্লোগানে মুখরিত হয়েছিল সারাদেশ, কোথাও কমতি ছিল না। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, কিংবা পাড়াগাঁ, মহল্লা-মহল্লায় বর্ণ, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে বাঙ্গালী জাতীয়তায় সকল গণমানুষের মধ্যে সংগ্রামী চরিত্রে, বিপ্লবী চেতনায়, উদ্বেলিত এক অভিনব গণআন্দোলন। ভাষা আন্দোলন ও ৬৯ এ সূচিত গণআন্দোলন পর্যায়ক্রমে, গণজোয়ারে রূপ নেয়, দল মত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মধ্যে সৃষ্ট ঐক্যতান। ৬৯ থেকে ৭১ সন যতই যাচ্ছে মানুষে-মানুষে বাংগালী জাগরণের ঐক্যের বাঁধন ততই মজবুত হচ্ছে। কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র, শিল্পি, যুবক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীর সমন্বয়ে সুদুর টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সকল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এক বীর বাংগালী দর্পের ঐক্য। ৭১ এর শুরু থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহুর্ত যেন সমুদ্রের প্রাণনাশী উত্তাল তরঙ্গ।

সমগ্র দেশবাসী বঙ্গবন্ধুর দৈনন্দিন কর্মসূচীতে প্রতিটি নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা নিবেদিত। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একবারেই নগন্য। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে একটি টেলিভিশন দুরের কথা এক ব্যান্ড রেডিওতে খবর শুনাও ছিল অতি দুর্লভ ব্যাপার। এ দুর্লভতাও কাটিয়ে ছিল মানুষে-মানুষে হৃদয়ের পরশে আন্দোলিত সারাদেশ, এক একাকার, একসূত্রে গাঁথা। আজ মনের গভীরে প্রচন্ড ধাক্কা দেয়, সেই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের, বাঙ্গালী চেতনার রক্তঝরা দিনগুলোর স্মৃতি কথা। আরও মনে জাগে ৯ মাস ব্যাপী রক্তাক্ত মরণযুদ্ধে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের শরনার্থী ক্যাম্পে ১ কোটি অসহায় বাঙ্গালীর মানবিক জীবন যাপনের পর দেশের অভ্যন্তরে লক্ষ-লক্ষ বাড়ি-ঘরের ধ্বংস স্তুপ, ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত সম্ভ্রম, ও ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মার বিনিময়ে অবশেষে অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর’৭১ এই বাঙ্গালী জাতির বিজয়। তারপর ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এই চারটি স্তম্ভের ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করে সারা বিশ্বে। কাজেই ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতির কাছে অতিপ্রিয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বে ভাষা ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিতে জন্ম নেয় একটি দেশ, সেই দেশটি আমাদের বাংলাদেশ।

তাই আন্তর্জাতিক ভাবে জাতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে ধন্য হয় বীর বাঙ্গালী গোটাজাতি। বিংশ শতাব্দিতে ভাষা আন্দোলনের ৮ ফাল্গুন মহান দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ১৮৮ টি দেশে এই দিনটি উদযাপিত হয়। ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মূল উৎস ছিল ১৩৫৮ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা। কালের বিবর্তনে ঘুরে আসা ৪০ তম বিজয় দিবসটি বিতর্কিত চেতনায় প্রভাবিত হয়েছিল, বাঙ্গালীত্ববোধ ভুলে, বিভ্রান্ত চেতনায় সাম্প্রদায়িক কলহের বীজ ছড়িয়ে দিয়েছিল বাঙ্গালী সংখ্যালঘুর হিসাব কষে, বৃটিশের রোপিত বীজ এর চারা গজানোর উন্মত্ততায় ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর এর বিজয়ের দিনটি ২০০১-২০০৫ সনে গত হয় আমাদের দ্বার প্রান্ত থেকে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক উন্মাদনায়, সংখ্যালঘু উৎপীড়নসহ খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, লুটতরাজের তান্ডবে।

আইন-শৃংখলা বিঘœকর অকল্পিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মাঝে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সহ মানবতা, মানবাধিকার, নারীর ইজ্জত, মানসম্ভ্রম লাঞ্ছিত, ভুলুন্টিত হবার বিপর্যয়ে। এ বিপর্যয়ের তীব্রতা আগামী প্রজন্মকে কি উপহার দিবে ? তা ভেবে সুধী চেতনার আত্মদহনে গত হয়েছিল বিজয় দিবস ২০০১-২০০৫ আতংকিত, সংকুচিত, বিব্রত ছিল কুক্ষিগত সুধী মহল। ছিল না তাদের বিজয় উল্লাস। তারা শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি জাতির জনক শেখ মুজিবকে, শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী তখনকার সকল রাজনৈতিক দল ও সকল ছাত্র সংগঠন এর নেতা কর্মীদের, মুজিব নগর সরকার গঠনকারী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিল্পি, কলা-কৌশলীকে। শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি বীর শহীদদের ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংঘ, দাতা দেশ, গণতান্ত্রিক ভারত সরকারের সংগ্রামী জনগণকে, যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র রসদ, বারুদ, বাসস্থান সহ এক কোটি শরনার্থীর আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে স্বাধীনতা যুদ্ধকে সফল ও সার্থক করে এই বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি অগনিত মা-বোনদের।

যারা দেশের অভ্যন্তরে থেকে পাক হানাদারদের অত্যাচার নির্যাতন, জুলুম সহ্য করেও ৯ মাস ব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয় ও খাবার দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহায্য সহায়তা করেছিল, শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি সেই সমস্ত জানা-অজানা নিপিড়ীত, নির্যাতিত, পঙ্গু ও শহীদ ভাই-বোনদের, যাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর এর বিজয়ে এ স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ। ২০০০ সনে এই বিজয় দিনটি ছিল স্বাধীনতা রক্ষার শপথের দিন। এদিনটি বাঙ্গালীর স্বাধীনতার দিন, বিজয় উল্লাসের দিন। স্বাধীনতার ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দিন। কিন্তু ২০০১-২০০৫ সনের বিজয় স্বাধীনতা অর্জনকারী নেতৃত্ব, চেতনশীল রাজনীতিবিদ, নেতা-কর্মী জনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয় গভীরে অব্যক্ত বেদনার করুণ সুর ধ্বনিত হয়েছিল কাল পরিক্রমার অমোঘ নিয়মে ফিরে আসছিল এ বিজয় দিনটি ১৬ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক সকল সুধী মহলের দ্বারপ্রান্তে উদীয়মান হয়েছিল নির্বাচনোত্তর দেশব্যাপী অব্যাহত নৃশংসতার ভয়াবহ তান্ডব। জাতীয়তাবাদ চেতনা ধ্বংসের লেলিহান শিখা, সাম্প্রদায়িক বর্বরতার পাশবিকতা, স্বাধীন রাষ্ট্রীয় মুলনীতির মুমূর্ষতা, মানবাধিকার মানবতা লঙ্ঘনের জঘন্য প্রবনতা, নারীর অমর্যাদা ও মা-বোনদের ইজ্জত লোটাসহ নিষ্পাপ শিশু হত্যার করুণ বেদনার নির্মমতা ও নিয়মবেদী আইন-শৃংখলা বিঘœকর কার্যকারিতা। এদিনগুলো গত হয়েছে ধর্ষণ, বোমাবাজী, হত্যা, লুটতরাজ, ভাংচুর, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জবরদখলের পরোয়ানায় ভুলুণ্টিতের পথে মানবতা ও স্বাধীনতা। লাঞ্ছিত হয়েছিল গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও অরক্ষিত ছিল সার্বভৌমত্ব। সাংবাদিক, সাহিত্যিকসহ সকল সুধী মহল নিরাপত্তাহীনতায় বিপর্যস্থ ছিল। ৭১ এর চেতনাকে ফিরিয়ে দিয়ে সুদৃঢ় বাঙ্গালী চেতনায় কলঙ্কের কালিমা লেপন করেছিল। আঘাত হেনেছিল সৃষ্টির সৃজনশীল কর্মকান্ডে করেছিল আইন-শৃংখলা পদদলিত, জনজীবন শৃংখলিত। পাশাপাশি রমজান মাসের ধর্মীয় অনুভূতি সংযম, পবিত্রতা, দান, খয়রাত, ইবাদত-বন্ধিগী, নামাজ, রোজাও ঠেকাতে পারেনি ’৭১ এর এই বর্বরোচিত আসুরিক চেতনাকে ২০০২ এর বিজয় ও রমজান অঙ্গাঅঙ্গীভাবে উপলব্ধি করেছে এ জঘন্য সহিংসতাকে। আংশিকও কমতি ছিলনা বিজয়ের পাশাপাশি স্রষ্টার ইবাদতে রমজান মাসটিতে পবিত্র রমজান উপলব্ধিতে মানুষে-মানুষে সৌহার্দতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের হানি ঘটেছিল শুধু সংখ্যালঘু নয় সংখ্যাগুরুও বাদপরেনি নৃশংসতার হাত থেকে।

শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বর্ণিত ধারা এবং শেষ নবী ও রসুল (সাঃ) এর অনুস্মরণীয় ইসলামে জাগরণ ঘটেছিল কি ? ছিল ধর্মীয় চেতনা প্রশ্নের সম্মুখীন। তাহলে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রসুলের কথা, “তোমরা পরষ্পর পরষ্পরের ভাই” এবং রসুলের পূর্বাপর শান্তির বাণী প্রচারের গতি ধারা, ইসলাম মানে শান্তি এ সমস্ত ধর্মীয় চেতনাও ম্রিয়মান হয়েছিল, সত্যিকার ইসলামিক চেতনায় মুসলিম জাগরণ ঘটলে তো সকল মানুষের সম অধিকার মানুষে-মানুষে হিংসা, ভেদাভেদ, হানাহানি দুরীভূত হয়ে, শান্তিময় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার নজীর হতো। মানব সভ্যতা মনুষ্যত্ব বিকাশের পথ রচনায় বাঙ্গালী শুধু বীর বাংগালী নয় মহাঅবতার অলী আওলিয়ার দেশ আধ্যাত্ববাদীদের দেশ ও প্রেমিকের দেশ অখন্ড ভারত বর্ষের অংশ হিসাবে বাংলাদেশও অধিকার পেত। বাঙ্গালী শুধু আবেগ প্রবণই নয় প্রেমিক বটে। প্রভু সুন্দরের প্রেমাশ্রিত হয়ে এ বাঙ্গালী সতীব্রতা ও পতিব্রতা মায়েরা অতীতে অনেক মহাপুরুষের জন্ম দিয়েছেন। বাঙ্গালী ভীরু নয়, কাপুরুষ নয় তবে এখন বিপদগামী এবং দরিদ্র বাঙ্গালী অস্ত্র, বোমা, অর্থ, পিস্তল, রিভলবার এর ক্ষমতায়, ক্ষণস্থায়ী ধন, জন, ক্ষমতার নেতৃত্ব ও যৌবনে বিশ্বাসী, আসল বস্তু স্রষ্টায় বিশ্বাসী নয়। তাহলে এখনও কেন ইসলাম ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে, পুঁজি করে বিভ্রান্তির পথ রচনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বৈতরণী পারা-পারে ব্যবহার করে ধর্মকেও বিতর্কিত করা হচ্ছে। মানবতা মনুষ্যত্ব বর্জিত ধর্মীয় কর্মকান্ডে ধ্বংসের পথ রচিত হয়। রমজানের পবিত্রতা বিজয়ের উল্লাস স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল লাখ-লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে, মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে, ভারতে আশ্রিত শরনার্থী হয়ে, স্বামী হারা, স্ত্রী হারা, পুত্র হারা, ভাই হারা, বোন হারা মানুষের করুন আর্তনাদের ব্যাথায় অর্জিত শেখ মুজিবের আহ্বানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সোনার বাংলায় পুনর্বাসনের পর মাত্র ৩ বছরের মধ্যে আবার সদ্য প্রসুত মাকে রক্তাক্ত করার শোকগাথা যন্ত্রনা। স্মৃতিতে ভেসে উঠছে সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে পরাজিত পাকহানাদারের মদদপুষ্ট স্বাধীনতা বিপক্ষীয় শত্রু বেইমান মীরজাফরদের, বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবার পরিজন হত্যার ঘটনা। এই নির্মম নৃশংস ঘটনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র রাসেলও বাঁচতে পারেনি। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনীয় কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সাথী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, মুনসুর আলী, কামরুজ্জামানকে হত্যার বেদনা। কাজেই রাজনীতিতে নেই, প্রজারঞ্জন, দেশপ্রেম, জনস্বার্থ, দেশ উন্নয়ন মানুষের সমঅধিকার স্থাপনে, দুঃখী অবহেলিত মানুষের মুখে হাঁসি ফুটানোর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সঠিক কর্মসূচী ও কর্মপ্রবণতা। কাজেই ক্ষমতায় গিয়ে জনস্বার্থে দেশ পরিচালনার নেই তৎপরতা। সকল সরকারই ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতা গদী নিয়ে কলহ দ্বন্ধে মেতে উঠে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যে জুটে বিরম্বনা দুঃখ যন্ত্রনা। সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীরাও বিভ্রান্ত্রির পথে হঠকারী রাজনীতিতে পা বাড়ায়। বেকারত্বের কষাঘাতে দারিদ্রতার লড়াইয়ে জয়ী হতে না পেরে ধৈর্য হারিয়ে বিপথগামী হয় ছাত্র যুবসমাজ। দলীয় করণের প্রখরতার, প্রভাবে জনসাধারণ অনিশ্চয়তা নিরাপত্তাহীনতা অশান্তিতে দিন কাটায়। ক্ষমতায় যেই যায় সেই সাজে রাবন।

তাই প্রজারঞ্জন রাম রাজত্বের অভাববোধে বাংগালীর শান্তির পথরুদ্ধ। তারা স্বাধীন হয়ে পরাধীনতার মন্ত্রে আবদ্ধ। রাম চরিত্রের উদারতায় রাম সীতা যায় বনবাসে, রাম কুন্ডলীর লঙ্গন করায়, রামের কথা অমান্য করে সাধুবেশী অশুর রাজা রাবণকে ভিক্ষা দিতে গিয়ে সীতা যায় লঙ্কাপুরীতে রাবণের বন্ধী হয়। সীতা উদ্ধারের কারণে রাম রাবণের যুদ্ধ ঘটে। রাবণের অহংকারে আশুরিক প্রভাবে লংকাপুরী হয় ধ্বংস। মাতৃজাতি সীতা হরনের কারণে সত্যের জয়, সত্যই শক্তি প্রমাণ রেখে রাক্ষসরাজা রাবণ হয় নিহত। সতী নারী অপহরনে অসুর শক্তি পরাজিত। জয়লক্ষ্যে রামের সম্মান রক্ষা করে ভক্ত হনুমান। ভগবানের চেয়ে ভক্ত বড় এই তার প্রমাণ। প্রজারঞ্জনের জন্য সীতা উদ্ধারের পর সহধর্মীনি সীতাকে সতী জেনে ও রাম দেন অগ্নিপরীক্ষা। সীতাদেবী রাখেন সতীত্বের প্রমাণ, অগ্নিদাহ হয়নি সীতা। প্রজার কল্যাণ, ভক্ত, সতীত্ব, সত্যের জয়, হয়েছে এখন আদি ইতি কথা ধর্ম কথা, গল্পকথা কাল্পনিক কাহিনী। তাই সুধী মহলের ভাবনা ছিল বিজয় মাসে রাবণের কর্মতৎপরতার চলমান গতিধারায় পালাবদলের দিন আসুক, জাগোক জনতা, প্রাণে-প্রাণে ছড়াক আলো। আসুরিক রাবণের চেতনা বিনাশে রাম রাজত্বের সূচনা হোক। সত্যের জয় ডঙ্কা বেজে উঠুক। বাঙ্গালী চেতনায়, সত্য চির সত্য হোক। আসুরিক চেতনার মূল উৎপাটনে রাম রাজত্বের দেশ হোক বাংলাদেশ। শান্তিপূঁজারীর ঐক্য বাঁধনে প্রগতিশীল আন্দোলনের সৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সৃজনশীল, স্থিতিশীল রাজনীতির হোক প্রকাশ। দুর্নীতি সহিংসতা-সন্ত্রাসের বিনাশ ঘটুক বাংলাদেশের মাটি থেকে। স্বাধীনতার মর্যাদা পরিপূর্ণ হোক। বাংলাদেশে, বাংগালীর নিজস্ব স্বকীয়তায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াক পৃথিবীর মানচিত্রে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, স্বাধীনতার গর্বে, বাঙ্গালী জাগরণের কেন্দ্রস্থ হোক সাম্প্রদায়িকতার জাল ছিন্ন করে। বিশ্ববাসী জানুক বিজয় দিবস আনন্দ উল্লাসের দিন, বীরত্বের দিন, বাঙ্গালী জেগে উঠার দিন।

সারা বিশ্বে বাঙ্গালী-বাঙ্গালীতে প্রণয়ের দিন। কিন্তু ২০১২ বিজয় দিবস ১৬ ই ডিসেম্বর উদযাপনের আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী হামলা, নৃশংশতা হরতাল করে গদী রদ-বদলের পায়তারা। অগ্নি সংযোগ, ভাংচুর, পুলিশ সহ হতাহতের ঘটনা। সম্প্রতি রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় রণক্ষেত্র ঘটে। ৪৭ তম বিজয় দিবস উদযাপন হোক কালো টাকার রাজনীতি মুক্ত শান্তিময় বাংলাদেশ উপহার দিতে রাজনীতিবিদদের চেতনা জেগে উঠুক জনস্বার্থে। গ্রাম-বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর লক্ষ্যে শুরু হোক বর্তমান সরকারের সুদৃঢ় কর্মতৎপরতা। বিগত দিনের বিজয় মাসের দুর্ভাবনা মুক্ত করতে আগামীর পথ চলা হোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগ দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করে বঙ্গ-বন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা লক্ষ্যে সুচিন্তিত পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ চলা। মানব কল্যাণ মূখী চেতনায় অর্থনৈতিক মুক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সুনিদৃষ্ঠ কর্মসূচীতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা ও সুদৃঢ় পদচারণা। বাঙ্গালীত্বে সকল ভেদা-ভেদ হোক মুক্ত। বিজয় হোক নিজস্ব স্বকীয়তায় সত্য চির অম্লান। আগামী প্রজন্মের কাছে চির বীরত্ব গাঁথা স্বাধীনতার ইতিহাস। মর্মে মর্মে উপলব্ধি হোক চির বিজয়ের স্বাদ। বিজয় দিনে আত্মহননে সমোচ্চারিত সর্বমহলের একই প্রয়াস হোক। জয় বাঙ্গালীর, জয় বাংলার, জয় হোক স্বাধীনতার, জয় হোক খেটে খাওয়া কৃষক শ্রমিক জনতার, বিজয় দিবসের আনন্দ-উল্লাসের অনুপ্রেরণায়। জয় হোক দুর্নীতি সন্ত্রাসী নৃশংসতা দমনে, সরকারের প্রশাসনিক চেতনা ও জাতীয় পতাকাকে অক্ষুণœ রাখার দৃঢ় প্রত্যয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার সুদৃঢ় শপথে। বিজয় দিবস দীর্ঘজীবি হোক। অমর হোক স্বাধীনতা।

লেখক – সাংবাদিক, সদস্য-কেন্দ্রীয় কমিটি
খেলাঘর আসর, ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *