শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশি স্কুলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত

বর্তমানকন্ঠ ডটকম, সৌদি আরব।   / ৬৪ পাঠক
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রিয়াদ, সৌদি আরব নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ১৭ মার্চ, ২০২১ তারিখ থেকে শুরু করে ২৬ মার্চ, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত ও “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’’ থেকে শ্রেণি ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রবাসের মাটিতে বেড়ে ওঠা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করা ও মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস এবং জাতির পিতার জীবনী থেকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টি করাই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল।

পরে ২৬ মার্চ, ২০২১ তারিখ সকালে অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে শিক্ষক প্রতিনিধিদল ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে শিক্ষার্থীদের রচিত দেয়াল পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। যাতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং কাউন্সেলর মোঃ আসাদুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম ও কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হক।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক খাদেমুল ইসলাম ও রসায়ন বিভাগের প্রভাষক আহমেদ করিম ইমনের যৌথ সঞ্চালনায় সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত ও তরজমা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশমাম হামীম। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবা সুলতানা আনিকা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন তাসনিম সিদ্দিকা মুস্তাক। পরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিদ্যালয়ের আয়োজিত বিভিন্ন কর্মকান্ডের উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় এবং তার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবহুল ঐতিহাসিক জীবনের প্রামাণ্যচিত্রও সংযোজিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেন আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্রের আলোকে স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সকল দুঃসময়ে তাঁর সহযোগিতা পেয়ে প্রবাসের বুকে শত প্রতিকূলতার মাঝে দৃপ্ত এই বিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সফিকুল সিরাজুল হক দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসেনানিদের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান প্রকাশ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি সময়োচিত ও যুগান্তকরী পদক্ষেপে মাত্র নয় মাসে বিজয় অর্জনে অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। মুহাম্মদ আবদুল হাকিম মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিনয়মিশ্রিত শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তাঁরা আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। এখন আমাদের উচিত স্বাধীনতার প্রধান চার মূল নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আসাদুজ্জমান তাঁর মূল্যবান বক্তৃতায় আজকের নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তৎকালীন সময়ে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানীদের বৈষম্যনীতির বিস্তারিত এক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। সেই বৈষম্যের হাত থেকে বাঙালিদের ত্রাণকর্তা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যথার্থ সময়ে আবির্ভাব ও তার যথার্থ দিক নির্দেশনায় সমগ্র বাঙালি জাতিকে একত্রিত করে মাত্র নয় মাসে হানাদারদের রুখে দিয়ে বিশে^র মানচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়ার প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, সেই জাতির সুযোগ্য কন্যা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নতির মহাসড়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের দিকেও ঈঙ্গিত করেন।

সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ তার বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকে দেশকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে যার প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং অসামান্য অবদানের কথা বিসদভাবে তুলে ধরেন। আমরা ইতোমধ্যে অনেক সূর্যসন্তানদের হারিয়েছি, যারা আমাদের একটি সুন্দর দেশ উপহার দিতে গিয়ে সেদিন অস্ত্র হাতে জীবন বাজী রেখেছিলেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গী পাড়ায় জন্ম দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে আমাদের জাতীয় নেতার আসন অলঙ্কৃত করেন এবং ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ডাক দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তির সংগ্রামে শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি আরো স্মরণ করে জাতীয় চার নেতাকে যারা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক অস্থায়ী সরকার পরিচালনা করে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬৮ সালে আগতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে যেন সমগ্র বাংলায় দিয়াশলাই কাটিতে ঘঁসে আগুনের লেলিহান জ¦ালিয়ে দিয়েছিলেন, তার উত্তাল লেলিহানে একসময় এই হানাদার বাহিনীই ভষ্মভূত হয়ে যায়। জাতির পিতা হানাদারদের সকল ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণে জাতিকে সঠিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ছোট ছোট ঝরণা ধারা যেমন মহাসাগরের জন্ম দেয় তেমনি বাঙালির রাজনৈতিক বিভিন্ন ছোট ছোট আন্দোলনের ধারা ১৯৬৯ এ মিশে বঙ্গবন্ধুর মোহনায়। যার সম্মিলিত ক্ষরস্রোতার কাছে পাকিস্তানের সব বাঁধ ভেঙে যায়। লাখ লাখ বাঙালির রঙে এ মাটি ভিজেছে। লাখো মায়ের কোল খালি হয়েছে। ঘর-বাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে। সহায় সম্পদ পুড়েছে। সেতু-কালভাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হত্যা-মৃত্যু, প্রতিশোধ, জিঘাংসা-প্রেম, ক্রোধ-প্রীতি, জ্বালিয়ে-পুড়িয়েও দেশের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করতে পারে নি। কিন্তু ১৯৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে যেন পরাজিত শক্তি যেন আমাদের ওপর চরম প্রতিশোধ নিল। তিনি আশা করেন, দীর্ঘদিন উন্নয়নের ধারা ব্যহত হলেও জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ অচিরেই উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তিনি উপস্থিত সবাইকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানান।

পরে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং জাতির পিতাসহ সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক নেসার উদ্দিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *