শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসবমূখর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে। দিবসের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের রচিত দেয়াল পত্রিকা প্রদর্শন করা হয়। পরে অতিরিক্ত লোক সমাগম থেকে রক্ষা পেতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের বাসায় আলাদাভাবে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন প্রবাহের উপর এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং এর প্রথম সচিব মোঃ সফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর মুহাম্মদ আবদুল হাকিম ও কো-ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার গোফরান।
সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক মোঃ খাদেমুল ইসলাম ও রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুশফিক। মহান এই দিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরোয়া বিনতে আসিফ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ আজমাইন আনান।
স্বাগত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই আমাদের প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশ। দুটোই একে অন্যের পরিপূরক। আমাদের জাতীয় সত্ত্বার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ইঞ্জিনিয়ার গোফরান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। পাশিপাশি তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যার সঠিক দিক নির্দেশনায় আমরা মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন করে বিশ^বাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলাম। আর সেই মহামানবকে কিছু বিপদগামী সেনাসদস্য ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে জাতির ইতিাসকে কলঙ্কিত করেছে। তিনি তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। বর্তমানে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করে উন্নত বিশে^র দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যহত রাখায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুহাম্মদ আবদুল হাকিম যার আহ্বানে দেশ মাতৃকার টানে সবাই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল সেই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ০৭ই মার্চের ভাষণের জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের সকল দিক নির্দেশনাই প্রদান করেছিলেন। সেই ০৭ই মার্চের বেশ কিছু উদ্ধৃতি তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। মুসলিম উম্মার জন্য বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু উদ্যোগের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি অন্যটির প্রতিশব্দ। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। দেশে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত ছিলেন। কখনও কারাগারে থাকলেও আন্দোলন থেকে বিরত ছিলেন না। ভাষা আন্দোলন চলাকালে কারাগারে থেকেও ভাষার জন্য অনশন করেছিলেন। ০৭ ই মার্চ একটি স্বাধীন দেশের জন্য সকল রূপরেখা উপস্থাপন করেছিলেন। তার নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।
সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এক বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন তার বক্তৃতায়। তিনি বলেন, বাংলার রাজনীতির বরপুত্র বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। বাংলার রাজনীতির পথ কখনোই মসৃণ ছিলনা কিন্ত সেই দুর্গম পথে অসাধ্যকে সাধন করে তিনিই এনে দিয়েছিলেন আমাদের মুক্তির বারতা। তিনি আমাদের স্বাধিকার আন্দেলনে যুক্ত হয়ে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য মাত্র পঞ্চান্ন বছর বয়সে ৪৬৮২ দিন জেলে কাটিয়েছেন। এ ধরণের আত্মত্যাগ একজন মহামানব হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব ছিল। কোন অপশক্তি তাঁকে থামাতে পারে নি। তর্জনির গর্জণিতে এক ঐতিহাসিক ডাকে সমগ্র দেশ প্রেমিক জনতাকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে শত্রু মুক্ত করে স্বাধীনতা এনেদিয়েছেন। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটিও তিনি তার বক্তব্যে তুলে আনেন।
পরে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক নেসার উদ্দিন।